সাম্য ও মানবতার দূত কবি কাজী নজরুল ইসলাম -রাষ্ট্রপতি
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১৯:৪২ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৩
সাম্য ও মানবতার দূত কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর কালজয়ী লেখায় ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তিনি সময়, সমাজ ও মানুষকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, গেয়েছেন মানবতার জয়গান। বলেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। ২৫ মে ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী’ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কবির ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং লেখনী শোষিত-নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে আমাদের সোচ্চার হতে ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিক্ষা দেয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের অবসানে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন তূর্যবাদকের ভূমিকায়। শতবর্ষ পূর্বে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও ব্রিটিশ শাসনবিরোধী সংগ্রাম যখন জোরদার হচ্ছিল, নজরুল তখন অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের পটভূমিতে রচনা করেন ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থ যা তৎকালীন দুর্যোগে জনসাধারণকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল। এছাড়া, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাকে প্রশমিত ও মানবতাবোধ উজ্জীবিত করতে তিনি লিখেছিলেন প্রলয়োল্লাস, বিদ্রোহী, রক্তাম্বরধারিণী মা, আগমনী, ধূমকেতু, কামালপাশা, আনোয়ার, রণভেরী শাত-ইল-আরব, খেয়া পারের তরণী, কোরবানী, মহররমসহ অসংখ্য কবিতা। কবিতাগুলিতে তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে সমানভাবে ধারণ করেছেন।
মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলা সাহিত্যে নজরুলই প্রথম কবি যিনি অসাম্প্রদায়িক চিন্তাকে সুস্পষ্ট, উদার ও ব্যাপকভাবে উপস্থাপন করেছেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শক্ত ভিত্তিভূমি তৈরির মাধ্যমে তিনি সম্প্রীতির বন্ধন প্রতিষ্ঠায় ব্রতচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কুসংস্কার আর অন্যায়ের সকল আবরণ বিদীর্ণ করে নজরুল তৈরি করেছেন নতুন প্রেক্ষাপট, নতুন উপস্থাপন কৌশল ও ভিন্নতর ভঙ্গি। তিনি বিশ্বাস করতেন কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের, বিশেষ শ্রেণির কিংবা কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানে তাঁর পরিচয় নয়। তিনি সকল মানুষের, সকল সমাজের, সকল কালের। আমি মনে করি, তাঁর চেতনা ও মানবতাবোধ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের সঠিক পথ দেখাবে।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের কঠিন নিগঢ় কবির বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করতে পারেনি। নিজের ওপর ছিল তাঁর গভীর আত্মবিশ্বাস এবং সত্যের প্রতি তাঁর ছিল অবিচল আস্থা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান। আমি আশা করি, নতুন প্রজন্ম নজরুল-চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে এবং দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সাথে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত