‘সাম্প্রদায়িক হামলা’র প্রতিবাদে শাহবাগে অবরোধ, মানুষের চরম ভোগান্তি
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২১, ১৪:৩১ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’র প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা ১২টা) শাহবাগ মোড় বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অবস্থান করছেন বিক্ষুব্ধরা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রতিবার হামলার পর আশ্বাস দিলেও কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অনিরাপদ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।
দাবি তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- হামলার শিকার মন্দিরগুলো শিগগিরই প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। হত্যার শিকার পরিবারগুলোকে স্থায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তারা জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মন্দির সংখ্যালঘুদের বাসাবাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলার দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করারও দাবি করেন। তারা বলেন, সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করতে হবে। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্যের আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জিডিপির ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গৃহবধূ নাজমা খাতুন। সকাল ১০টায় মোহাম্মদপুর থেকে বাসে করে মাতুয়াইল মা ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট রোগীর জন্য খাবার নিয়ে রওনা হন। শাহবাগে সাড়ে দশটার মধ্যে পৌঁছে আটকা পড়েন তিনি। প্রথমে ভেবেছিলেন স্বাভাবিক যানজট, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই জানতে পারেন সারাদেশে পূজামণ্ডপে ভাঙচুরের প্রতিবাদে শাহবাগে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ করছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।
নাজমা খাতুন বলেন, গত আড়াই ঘণ্টা ধরে বাসে বসে আছি। কখন প্রতিবাদ সমাবেশ শেষ হবে তা বুঝতে পারছি না। বাস থেকে নেমে হেঁটে যাবো সে উপায়ও নেই। সবদিকেই রাস্তা বন্ধ। এখন অপেক্ষা ছাড়া আর কি বা করতে পারি।
নাজমা বেগমের মতো শাহবাগে এসে আটকা পড়েছেন অনেকে। শাহবাগ চৌরাস্তায় রাস্তা আটকে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রতিবাদ সমাবেশের কারণে কাটাবন থেকে শাহবাগ অভিমুখে এবং মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগমুখী শত শত যানবাহন (বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, পিকআপভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাসহ) আটকা পড়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাসের যাত্রীরা কেউ কেউ নেমে হেঁটে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কোনো কোনো যাত্রী সামনে গিয়ে আদৌ যানবাহন পাবেন কিনা তা ভেবে গত দুই তিন ঘণ্টা ধরে বাসে অবস্থান করছেন। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন যাদের তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন। ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে রাখার কারণে তাদের স্ব-স্ব যানবাহনেই অবস্থান করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রতিবাদকারীদের মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে শাহবাগ চত্বর। তারা সারাদেশে পূজামণ্ডপে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মমিন মিয়া বলেন, ধানমন্ডি থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাট রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু শাহবাগে এসে রাস্তায় আটকে পড়ার কারণে যাত্রী সামান্য ভাড়া দিয়ে নেমে যান। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। সিএনজি গ্যাস ও ব্যক্তিগত খাবার খরচ ছাড়া প্রতিদিনের জমা এক হাজার টাকা। এখানে বসে থাকা মানে রোজগার বন্ধ।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে বেশ কয়েক দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করে সকাল থেকে। ১১টার পর থেকে তারা রাস্তা বন্ধ করে রাস্তায় বসে পড়ে। আমরা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য বলছি। এখন পর্যন্ত তারা রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত