রূপকথার গল্প

সরোবরে অধরা অপ্সরা

  সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১০:১১ |  আপডেট  : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৪৯

সোহেল রিয়াজুল
----------------------

বার্ষিক পরিক্ষা শেষ। স্কুল একমাসের জন্য বন্ধ দেয়া হয়েছে। পরিক্ষা শুরুর আগে থেকেই অপ্সরার ইচ্ছে এবারের ছুটির পুরো সময়টা নানা বাড়িতে কাটাবে।

পাইকশা গ্রামের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা হয়ে একটি সুন্দর খাল বয়ে গিয়েছে ঘোড়দৌড় বাজার পর্যন্ত। না, ঘোড়দৌড় পেরিয়েও অনেক অনেক দুরের গ্রামে চলে গিয়েছে ওই খাল। খালের পাশে ঘন ধইঞ্চা ক্ষেত দূর থেকে দেখা যাচ্ছে।গুচ্ছ গুচ্ছ ধইঞ্চাদল আম গাছের ডালে বাঁধা দোলনার মতো বাতাসে দুলছে।

পাইকশা গ্রামের কাছাকাছি গোয়ালীমান্দ্রা হাট। প্রতি মঙ্গলবার সেখানে হাট বসে। লোকে লোকারণ্য থাকে ওই হাট। আবার হাট শেষ হয়ে যাবার পরে ওই গোয়ালীমান্দ্রায় বিরাজ করে এক সুনসান নীরবতা।গোয়ালীমান্দ্রা হাট দেখতে অনেকটা ছোট টিলার মতো।সারি সারি অস্থায়ী দোকানঘর সেখানে। হাটের পশ্চিম পাড়ে বাঁধা রয়েছে সারি সারি অনেক নৌকো। ওই নৌকোঘাট থেকে নৌকো ভাড়া করেই যেতে হবে নানু বাড়ি।

অর্ধ বৃত্তাকার করে মুলিবাঁশের চটি দিয়ে ছাউনি দেয়া নৌকো গুলোকে বিক্রমপুরে কেরাই নৌকো বলে। ওই নৌকোর ছাউনির নিচে আব্বু,আম্মু আর ছোট আরও দু'বোন বসে আছে। নৌকো যখন চলা শুরু করেছে অপ্সরা তখন সামনের গলুইয়ের দিকে গিয়ে বসে- দেখতে থাকে খালের দু পাশের হলুদ সরষে ক্ষেত,আর নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিচ্ছে সরষে ফুলের ঘ্রান। খালের অল্প পানিতে শুকনো গাছের ডাল অর্ধ ডুবিয়ে রেখেছে মাছ শিকারী লোকেরা। সেই ডালের উপর বসে আছে মাছরাঙা পাখি, আবার কোন কোন ডালের উপরে ছোট ছোট কচ্ছপের বাচ্চারা শীতের রোদ পোহাচ্ছে। নৌকো সামনে এগিয়ে গেলেই ঝুপঝাপ করে কচ্ছপের বাচ্চারা পানিতে নেমে পড়ছে। কি অপরুপ দৃশ্য!

আম, কাঁঠাল, জামরুল, আতা, নারকেল গাছের ঠাঁসাঠাসিতে ভরা নানু বাড়ি। বাড়ির উত্তর দিকের একেবারে শেষপ্রান্তে আছে একটি বড় পুকুর। অনেক ঝোপঝাড় আর গাছপালা ঘেরা ওই পুকুরের ধারে কাছেও কেউ কখনো যায় না। ওখানে কেমন যেন একটা ভুতুরে পরিবেশ থাকে সবসময় ।

এখন দিনের বেলা। বাড়ির সব জায়গায় হলুদ রোদ পড়েছে, শুধুমাত্র ওই উত্তরের ঝোপবনে দেখা যাচ্ছে কমলা রঙের রোদ।  বাড়ির সব গাছপালার পাতা এখন নড়াচড়া করছে না, অথচ  ওই উত্তর ঝোপবনের গাছের পাতার দুলনি শুরু হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ বাড়ির এদিকটায় দইকুলি আর ঘু ঘু পাখির ডাক বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু উত্তর ঝোপবনে এক অচেনা পাখির সুর শোনা  যাচ্ছে। সে কণ্ঠ কখনই সাধারন পাখির মতো নয়, কন্ঠ শুনে মনে হয় এ যেন সমবেত তানপুরার সুরেলা ঝঙ্কার! অপ্সরার কেমন যেন খটকা লাগছে। কি আছে ওই উত্তর দিকের ঝোপবনে? ওই পরিত্যক্ত অথচ ভরাজলের ওই পুকুরটা তে? কেন সবাই ওই উত্তর দিকটাতে যায় না? কেন অমন কমলারঙা রোদ ওই দিকের বেতবনে দেখা যাচ্ছে? এটা কেমন এক পাখি, যে- কিনা তানপুরার ঝংকারের মতো সুরে ডাকে? কি সব এক এলোমেলো ভাবনায় অপ্সরার সময় পার হয়ে হচ্ছে।

পরেরদিন বিকেলে বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আব্বু- আম্মু বেড়াতে গিয়েছে পাশের বাড়ির মামাদের বাসায়। অপ্সরা শুধু একা জেগে আছে। নানুবাড়ির কাঠ আর টিনের তৈরি দোতালা ঘরের ঝুলন্ত বারান্দায় সে বসে আছে। হঠাৎ মনে হল আজ ওই উত্তর বনের ঝোপে যাবো। আস্তে আস্তে অপ্সরা হেঁটে যায় ওই ঝোপবনের মাঝে। একি! এখানে তো দেখছি আরও গাড় কমলা রঙের রোদ পড়েছে। গোলাপি আর বেগুনীরঙা পাতার দুটি অচেনা গাছ র'য়েছে সেখানে। হলুদ, হালকাসবুজাভ সবুজ, নীলাভসবুজ,খয়েরীসবুজ কতো রঙের পাতার গাছ আছে এই পৃথিবীতে, তাই বলে গোলাপি আর বেগুনী রঙের পাতা একই গাছে? এতো অবিশ্বাস্য অসম্ভব ব্যাপার!
 
অপ্সরা গাছের পাতাগুলো ছুঁয়ে দেখল,' বাহ এতো সুন্দর ! এতো চকচকে রঙ ! দেখে যেন মনে হচ্ছে মুষলধারের বৃষ্টিশেষের জলধোয়া পল্লবগুচ্ছ! ' অপ্সরা  আনমনে ভাবছে,'এই জায়গাটা এতো সুন্দর কেন? আচ্ছা তাহলে এখানকার রুপের বর্ণনা কেউ কেন করে না? এদিকটাতে আসতে কেন বারন করা হয়েছে?' নানু বলেছে, এখানে নাকি ভুত পেত্নী থাকে। কিন্তু অপ্সরা এতো এতো সব এলোমেলো সুন্দর এসব কি দেখছে? গোলাপি আর বেগুনী রঙা পাতার গাছে সবুজ রঙের ফুল ফুটে রয়েছে।  কতগুলো প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। প্রজাপতি গুলোর একেকটির এক পাখা সাদা আরেক পাখা টকটকে লাল। আরেকটির এক পাখা সবুজ আরেক পাখা লাল, কি অদ্ভুত ব্যাপার! একই প্রজাপতির প্রত্যেক টি পাখা আলাদা রঙের ?

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। কমলারঙা রোদ মিলিয়ে গিয়ে সবুজরঙা রোদ হয়ে নীলরঙা, তারপর ধীরে ধীরে গাড় ধূসররঙা হয়ে যাচ্ছে। অপ্সরা বাসার দিকে চলে আসছে।
সন্ধায় সবাই জল খাবার খেতে বসেছে। এক মগ চা হাতে করে অপ্সরা দোতালার বারান্দায় চলে গেল।মাথায় বিকেলের ওই ঝোপবনের স্বপ্নিল দৃশ্যগুলো কেবল ঘুর পাক খাচ্ছে। উত্তরের দিকে আবার উঁকি দিয়ে দেখল অপ্সরা ; নতুন কিছু দেখা যায় কিনা? না তেমন কিছুইতো দেখা যাচ্ছে না। সব কিছুই স্বাভাবিক। সব কিছুই আগের মতোই আছে। নতুন কিছুইতো নেই ওখানে। ওদিকটা কেবলই সাধারন গাছ পালার বন মাত্র।

আজ খুব সকালেই ঘুম ভেঙ্গেছে অপ্সরার। রাতেও চমৎকার ঘুম হয়েছে। সূর্য কেবল উঠি উঠি ভাব। কি যেনো মনে করে এক অদ্ভুত মায়ার টানে অপ্সরা সেই উত্তরবনে সোজা চলে গেল। পুবদিক  থেকে  কচি সবুজ ধানের রঙের মতো মিস্টি সবুজ আলো  ছড়িয়ে পড়েছে আজ। সে কিছুক্ষণ চোখ কচলিয়ে নিল। বাহ! এ তো আরও চকচকে সবুজ আলো ছড়িয়ে আছে এখানে। অপ্সরা  এবার চোখে হাত দিয়ে পরিক্ষা করে দেখল কোন সবুজ কাঁচের চশমা পড়েছে কিনা। না, কিছুইতো পড়েনি চোখে। মনে মনে অপ্সরা বলল,' হুম বুঝেছি গত বিকেলের মতোই আজ আবার শুরু হয়েছে স্বপ্নীল আলো আঁধারীর খেলা। '

পুষ্পবন পেড়িয়ে অপ্সরা একটু সামনে এগিয়ে গেল, সেই পুষ্করিণীর ধারে। এটা শাপলা শোভিত ঝলমলে রোদ্দুরময় এক সরোবর। নিরেট স্বচ্ছজলে ভরা ওই সরোবর। কিন্তু একি দেখল ওই স্বচ্ছজলে? এক অপরূপা অনিন্দ্য সুন্দরী ষোড়শী দাঁড়িরে আছে ওই জলের ভেতরে। এটা কি করে সম্ভব? অপ্সরা সামনে এগিয়ে গেল, ওই অপরূপা জলকন্যাও এগিয়ে এলো ঠিক যেন অপ্সরার নিজের ছায়ার মতো করে। অপ্সরা বসে দেখল জলকন্যাকে। জলকন্যাও ঠিক প্রতিবিম্বের মতোই অপ্সরার মুখোমুখি বসে পড়ল। অপ্সরা বললো, 'তুমি কে? ' জলকন্যা জলের ভেতর থেকে জলকন্ঠে শুধালো, 'আমি তোমার মিতে । আমার নামও অপ্সরা। আমি সপ্তাকাশ দুরের মেঘের দেশে থাকি। তুমি যখন তোমার নানু বাড়ি বেড়াতে আসো আমিও তখন এখানে আসি তোমাকে দেখার জন্য। আমি যে তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি বন্ধু।' অপ্সরা বলল,' কই আমিতো তোমাকে কোনোদিন দেখিনি এর আগে?'

ঃ কি করে দেখবে বলো? আমিতো কোন লোকালয়ে যাইনা। তাইতো জন মনুষ্যহীন এই নিরালা প্রান্তরটিই আমার প্রিয়। আমার চলাচল কেবল প্রভাত আর গোধূলির নরোম আলোর ভেতর দিয়ে। আবার ওই আলো ফুরিয়ে যাবার আগে আমাদের সপ্তাকাশের মেঘের দেশে চলে যাই। বন্ধু অপ্সরা আমি কিন্তু আর বেশিক্ষণ এখানে থাকতে পারবোনা।
ঃ কেন বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না?
: ওই যে দেখছ না, দুপুরের তীব্র আলো নেমে আসছে। ওই আলো আমার এই নরোম পেলব শরীরে সইবে না। তাই তো আমাকে এখনিই চলে যেতে হবে। আবার গোধূলির নরোম আলোয় ভর করে তোমার সাথে দেখা করতে আসবো এই সরবরের মাঝে। তুমি বিকেলে এখানে আবার এসো বন্ধু। এবার দয়া করে একটু চোখ বন্ধ করবে আমার মিতে? আমি উড়ে যাবো।
অপ্সরা চোখ বন্ধ করল। তারপর যখন চোখ খুলল দেখল- না আশে পাশে কেউ কোথাও নেই। জলকন্যা সরোবরের মাঝেও নেই। সে চলে গিয়েছে সপ্তাকাশের তাদের মেঘের দেশে।

অপ্সরা নানুর বাসায় চলে এসেছে। চুপচাপ বসে কেবলই ভাবছে, 'গতদিন থেকে এসব কি দেখছি? এ কেমন ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে? আব্বুর কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলি? আম্মুর কাছে বলব? না, এখনই বলব না। জানি, আব্বু এসব কিছুই বিশ্বাস করবে না। তিনি বাস্তবতায় বিশ্বাসী। উল্টো আরও পঞ্চাশ কথার বিষয়ে আলাপ শুরু করবে। মন, অবচেতনমন, পরাবাস্তব, তৃতীয়নয়ন আরও কতো কি বলবে কে জানে? সাথে সহযোগী বক্তা হিসেবে আম্মুতো থাকবেই। তার চেয়ে বরং আমি আমার ওই মেঘদেশের মিতে কে নিয়ে বেশ আছি। এইতো আর কিছুক্ষণ পরেই তো বিকেল হবে। তখন মেঘাপ্সরার সাথে দেখা হবে আমার।

পরন্ত বিকেল। সবাই দুপুরের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েছে। অপ্সরা তার খোলা চুলগুলো ঝাঁকুনি দিয়ে আরও খুলে নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে এলো। যথারীতি উত্তর বনঝোপের দিকে তাকাল। সব তো দেখছি আগের মতোই স্বাভাবিক। কোন পরিবর্তন নেই। অপ্সরার মন খারাপ হয়ে গেল। আবার অপলক তাকিয়ে রইল, না কোন পরিবর্তন দেখছে না। কি হল? মেঘকন্যা কি তাহলে আর আসবে না? একটা শঙ্কামন নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আনমনা ভাবতে লাগলো। এমন সময় রিনরিনে বীনার শব্দ শুনতে পেল। সুরঝঙ্কার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। খুশিতে আটখানা হয়ে উঠল অপ্সরা। আবার তাকাল উত্তরের দিকে। অইতো! অইযে গাড় কমলা রঙের রোদ উঠেছে। সে সোজা চলে গেল ওই উত্তর বনঝোপের ভেতরে। আজ কি মিষ্টি সুবাসিত বাতাশ বইছে চারপাশ জুড়ে। কেমন এক স্বর্গীয় সুগন্ধময় যেন ওই বাতাস! গাছের পাতা গুলো কেমন স্বর্ণময় লাল নীল হলুদ সাদা হয়ে মাটিতে পরেই আবার রুপোলী রঙা হয়ে যাচ্ছে। ওই তো ঐযে জলধির  মাঝেই দেখা যাচ্ছে মেঘকন্যাকে। অপ্সরা জলধির সামনে যেতেই মেঘকন্যা সেও ছায়ার মতো সামনে চলে এলো। অপ্সরা বলল, 'কেমন আছো বন্ধু?'
স্মীত হাসি দিয়ে মেঘকন্যা বলল, 'ভাল, বেশ ভাল আছি বন্ধু আমার।
ঃ উপরে মাটিতে চলে এসো বন্ধু। মেঘকন্যা এবার আগের চেয়ে আরও সুন্দর স্মীত হাসি দিয়ে বলল,'না বন্ধু, আমি হচ্ছি একটি অধরা অপ্সরা, তাইতো আমাকে ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না , তুমি আমাকে ছুঁয়ে দিলে আমাদের আর দেখা হবে না। চিরতরে আমি হারিয়ে যাবো। আর কখনই তোমাদের পৃথিবীতে আসতে পারবোনা। আমার শরীর এতো নরোম যে তুমি ছুঁয়ে দিলেই আমার শরীরে তোমার হাতের দাগ স্থায়ীভাবে পড়ে যাবে। আমাদের শরীরে পৃথিবীর মানুষের ছোঁয়া লাগলে পরে আর পৃথিবীতে আসার আমাদের ক্ষমতা থাকে না বন্ধু।'
: ঠিক আছে আমি তোমাকে ছুঁয়ে দেবনা , তুমি উপরে চলে এসো।
: সত্যি তো?
: হ্যাঁ সত্যি।
আচ্ছা এই আমি উঠে আসছি। মেঘকন্যা জল ঝড়িয়ে, সুগন্ধ ছড়িয়ে, মুক্তো ঝরানো হাসি হাসতে হাসতে উপরে উঠে এলো। তার রুপের আলোয় চারপাশ সোনালী আর রুপোলী আলোর মাখামাখি আর জড়াজড়িতে ঠিকরে উঠছে। মেঘকন্যা অপ্সরাকে বলল,' মিতে দু'হাত পেতে চোখ বন্ধ করো।' অপ্সরা স্মীত হাসি হেসে দু'হাত সামনে পেতে দিয়ে দু'চোখ বন্ধ করলো। কি যেন তার হাতে এসে পড়ল। তাকিয়ে দেখে একটি সোনার বাটিতে কি চমৎকার খাবার।
ঃ এটা কি খাবার অমন ঝলমলে? এগুলো খেতেই বা কেমন লাগবে?
ঃ এটার নাম রোশান্না চটপটি। এর বৈশিষ্ট হোল এটা একবার মুখে দিলেই তোমার মুখের স্বাদ সহস্রগুন বেড়ে যাবে। শুধুই খেতেই ইচ্ছে করবে।
ঃ তাই ? তুমি এতো ভাল বন্ধু ! তুমি এতো মিষ্টিময়!
ঃ হুম, স্মিত হেসে মেঘকন্যা বলে-‘ অপ্সরা তাকিয়ে দেখ তোমার পায়ের কাছে, আরও কতো খাবার আমি তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।
ঃ তাইতো দেখছি! এতোসব সোনার বাটির ভেতরে আর কি কি আছে বন্ধু?
ঃ এটাতে আছে ঝিলিক বাহার চপ,অন্যটায় মেঘচুর আইসক্রিম, আরেকটাতে রংধনু সরেস গোল্লা আর ওই যে নীলমনিখচিত বাটি, ওটাতে আছে নীলাম্বরী পাতদই।
ঃ নীলাম্বরী পাতদই? সেটা কেমন?
ঃ ওটা আকাশের নীলের মতো রঙের দই। এর স্বাদ এতো অভূতপূর্ব যে আমি বর্ণনাও করতে পারছি না। এতো, এতই মজাদার আর সুস্বাদু!
ঃ ও বন্ধু ! আমার মিতে মেঘকন্যা অপ্সরা। তুমি- তুমি এতো ভালো বন্ধু আমার? তুমি আসলেই অতুলনীয়, চমৎকার ! বলেই অপ্সরা প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে পেছনের কথা ভুলে গিয়ে জড়িয়ে ধরল মেঘকন্যাকে।

মেঘকন্যা তিন পা পেছনে চলে গিয়ে করুন চাহনী আর সামান্য হেসে বলল, 'এ তুমি কি ভুল করলে প্রিয় বন্ধু আমার! আমাকে যে তুমি, তোমার মনের অজান্তেই ছুঁয়ে দিলে! আমি যে আর এখানে থাকতে পারব না। আমার আর পুনরায় পৃথিবীতে আসার  ক্ষমতা থাকবে না। তবে আরও দুই কুড়ি দুই শ বছর পরে আবারো শুচিশুদ্ধ হয়ে আসতে পারব। ততদিনে তুমিই চলে যাবে আমার দেশে, ওই সপ্তাকাশে ওই মেঘের দেশে। যেখানে এখন আমি থাকি বন্ধু। জানো বন্ধু, আমিও এক সময়ে  তোমার মতোই এই পৃথিবীতে ছিলাম। এই যে এতো সুন্দর আলো দেখছো, এগুলো আমি ছড়াতে পেরেছি। কারন- পৃথিবীতে থাকাকালীন সত্য আর সুন্দরকে  যাঁরা ভালবাসবে তারাই কেবল এই আলো ছড়াতে পারবে। মৃত্যুর পরে সে ওই সপ্তাকাশের বাসিন্দা হলেও তার আলো ছড়িয়ে থাকবে তোমাদের ভুবনে। আমি এখন মেঘাপ্সরা, আগে ছিলাম আলো; মানে আমার নামের অর্থ ছিলো ভুবনের আলো। মনে হয়, তোমাদেরকে- অন্তত আমার সাথে যাদেরই পরিচিতি বা দেখা হবে তাঁদের যেন অন্তত আমার কর্ম আর আচার আচরণে আলোকিত করতে পারি, তাই হয়তো আমার বাবা আমার নাম রেখেছিলেন 'রওশন আরা' ; যার অর্থ স্বর্গীয়  আলো বা জগতের ঝলমলে আলো । ভালো থেকো বন্ধু, বিদায় অপ্সরা।'

দেখতে দেখতে আবারো হলুদ, সোনালী, রুপোলী, সবুজ, কমলা আলোর বিচ্ছুরন ছড়িয়ে  দিয়ে মেঘকন্যা উড়ে যাচ্ছে। উড়ে যাচ্ছে দুরের ওই মেঘের দেশে। দূরে –দূরে- অনেক দূরে; নীল আকাশ ফুঁড়ে ফুঁড়ে ক্রমশ ছোট হতে হতে মিলিয়ে যাচ্ছে ওই দূর আকাশের দিকে। বিস্মিত আর অপলক চোখে অপ্সরা তাকিয়ে আছে ওই আকাশের দিকে, মেঘকন্যার চলে যাওয়ার দিকে। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত