সরকার টাকা দিয়েছে, টিকা আনার দায়িত্ব এজেন্টের : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১৫:২৫ | আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:২১
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী করোনাভাইরাসের টিকা পেতে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে টিকা সরবরাহের জন্য আলাপের পরও তিনি (পাপন) কী চান আমি বুঝতে পারছি না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টিকা আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আর টিকার জন্য সরকার টাকা দিয়ে দিয়েছে। এখন আনার দায়িত্ব এজেন্টের।
রোববার (২৫ এপ্রিল) ভারত থেকে টিকা আনার বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না আসলে এটা তিনি কেন বললেন? আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে, সচিব পর্যায়ে…রাষ্ট্রদূতকে প্রতিদিন বলা হচ্ছে, তিনি প্রতিদিন দিল্লি থেকে চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বড় গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও টিকার ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন। এরপর আর কী থাকতে পারে।’
শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ সময় তিনি ভারতের সেরাম থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা পেতে সরকারের জোরালো পদক্ষেপের কথা বলেন। নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আমাদের লিখিত জানিয়েছে, তাদের সরকার আটকে রেখেছে। তাই আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি। এরপর আমাদের চুপ করে থাকার কোনো কারণ নেই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমরা কোনো কমান্ডো পাঠিয়ে জোর করে সেরাম থেকে টিকা নিয়ে আসতে পারব না। আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। তবে উনারা যেহেতু সেরামের একটা অংশীদার, শেয়ার হোল্ডার, উনারা চুক্তি করেছেন, সুতরাং তাদের উচিত সেরামকে চাপ দেওয়া। সেটা করছে না কেন? খালি সরকারের ওপর ছেড়ে দেয়, সরকার তো পয়সা দিয়ে দিছে পুরোপুরি। এখন এটা তাদের দায়িত্ব, তারা এজেন্ট, তারা চেষ্টা করুক। সরকার যদি চেষ্টা না করে বসে থাকত তাহলে…।’
গত বছরের নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ। বেক্সিমকো ফার্মা ওই টিকা সংরক্ষণ ও সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ দেওয়ার পর ভারতে ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে বিপুল চাহিদা তৈরি হয়। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে টিকার সংকটের কারণে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়। এরপর আর কেনা টিকা আসেনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতের টিকা পাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করা হলে বারবারই নয়া দিল্লির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল। তবে ঠিক কবে টিকা বাংলাদেশে পাঠানো হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেয়নি ভারত। সবশেষ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী নয়া দিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরে শনিবার (২৫ এপ্রিল) সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সহসাই পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানায়। একইসঙ্গে হাইকমিশন ভারতের বায়োটেকের উদ্ভাবিত ‘কোভ্যাক্সিন’ বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদনের প্রস্তাব দেয়। তবে বাংলাদেশ ভারতের অপেক্ষায় থাকলেও টিকা পেতে ভারতের পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, খুব দ্রুতই চীন থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে আসবে সরকার।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত