‘সরকারের দুর্নীতি’ তদন্ত করতে দুদকে চিঠি দেবে বিএনপি: ফখরুল
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৩৫ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮
‘ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারের দুর্নীতি’ তদন্তের দাবি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে [দুদক] চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে আজ সোমবার ১১ এপ্রিল দুপুরে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর টেলিফোন কনভারসেশনের বিষয়বস্তু’ ও ‘ফরিদপুরে ২ হাজার কোটি টাকার পাচারের বিষয়ে’ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠি নিয়ে যাবেন।
সোমবার ১১ এপ্রিল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান দুর্নীতির একটা মহোৎসব চলছে। আপনারা এখন সাহস করে অনেক কিছু লিখছেন, যার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতে পারছি। আমরা দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর টেলিফোন কনভারসেশন যেটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সেই কনভারসেশনে যে বিষয়গুলো ছিল সেটা আমরা জানতে চেয়েছিলাম, এর তদন্ত হয়েছে কিনা তাও জানতে চেয়েছিলাম। ফরিদপুরের অত্যন্ত সেনসিটিভ একটি পরিবার, সেই পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগ এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রায়শই এ বিষয়গুলো ধামা চাপা পড়ে যাচ্ছে। আর কোনও কথাই হচ্ছে না এগুলো নিয়ে। আমরা দলের সর্বোচ্চ ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা দুর্নীতির এই বিষয়গুলো নিয়ে আপাতত দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেবো। সেই চিঠিতে তাদের আমরা তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করবো। এরপরে ধারাবাহিক ভাবে প্রত্যেকটা ইস্যু যেটা আসছে সেটা আমরা জাতির কাছে তুলে ধরবো এবং একই সঙ্গে দুদকে পাঠাবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করবো দুদকের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা আমরা দুর্নীতির যে বিষয়গুলো দিচ্ছি সেগুলোর ওপরে সুষ্ঠু তদন্ত করে তা জাতির সামনে তুলে ধরবেন এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ যে ব্যবস্থা আছে তা গ্রহণ করবেন।’
‘দুর্নীতির বিষয় দুদক আমলে নিচ্ছে না’
‘দুদক অনেক সেনসেটিভ ইস্যু নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি’ অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, দুর্নীতি দমন কমিশনে একটু যারা কাজ করতে চান, তাদের স্টাফ অর্থাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের বিরুদ্ধে দুদকই ব্যবস্থা নেয়। কিছুদিন আগে দেখেছেন যে, শরীফ নামে এক কর্মকর্তা একটি বিশেষ দুর্নীতির মামলার তদন্ত করার কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন।’
‘আজকে পত্রিকায় আছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির যেসব খবর আসছে, সেগুলো তদন্ত করে যে রিপোর্টগুলো আসছে সেগুলোর তারা আমলে নিচ্ছে না এবং সেগুলোকে তারা ধামাচাপা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করছে।’
তিনি বলেন, ‘দুদকের বেশির ভাগ সরকারি আমলাকে নিয়োগ দেওয়া হয় অথবা সাবেক আমলাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করেন যে, সরকারের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা যারা অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত যাতে না হয়।’
‘বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাটা তৈরি হয়েছে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য দুর্নীতি সবচেয়ে বড় ব্যাধি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা এখন ক্যান্সার আকারে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও ঘুষ দেওয়া ছাড়া কোনও কাজ হবে না, কথা শুনবে না, আইন-আদালতে বিচার পাবে না এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থাটা হচ্ছে আদালতে, সেখানে সব হুকুমে কাজ হয় সেখানেও কোনও কাজ হয় না দুর্নীতি ছাড়া।’
‘এর কারণটা হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দুর্নীতিকে আজকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।’
‘দুর্নীতির ওপর শ্বেতপত্র এখন নয়’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের শ্বেতপত্র প্রকাশের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা এখন দরকার নেই। তবে সেটা (শ্বেতপত্র) সক্রিয় আলোচনার মধ্যে আছে, বিবেচনার মধ্যে আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উপস্থিত ছিলেন। পরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু দুদকের উদ্দেশে গুলশানের কার্যালয় থেকে রওনা হন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত