সরকারি নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে পৌর মেয়রকে অপসারণ, সংসদে বিল পাস

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ১৪:৪০ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৩

সময়ে সময়ে সরকারের দেওয়া নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক বসানোর বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) বিল-২০২২’ পাস হয়েছে। বিদ্যমান আইনে নতুন পৌরসভা গঠনের পর প্রশাসক বসানোর সুযোগ ছিল। নতুন আইনে মেয়াদউত্তীর্ণ পৌরসভায় প্রশাসক বসানো এবং সরকার চাইলে যে কোনো ব্যক্তিকে এই পদে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।    

বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বিএনপি দলীয় সদস্যরা প্রশাসক বসানোর বিধানের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, এটা সংবিধান বিরোধী। কারণ সংবিধানে সর্বস্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কথা বলা রয়েছে। বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরোধিতা করলেও এখানে কেন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে বসানো হবে এই প্রশ্ন তোলেন বিরোধী সদস্যরা। এই আইন পাসের প্রতিবাদে বিএনপি দলীয় সদস্য হারুনুর রশীদ কিছু সময়ের জন্য সংসদের বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন। 

বৃহস্পতিবার সংসদের বৈঠকে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপণ করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।  পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগের বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়। গত ২৩ জানুয়ারি বিলটি সংসদে তোলা হয়। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয় ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিদ্যমান আইনে বলা আছে, পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার হতে হবে। এর কম হলে হবে না। সংশোধনে তা বাড়িয়ে দুই হাজার করা হয়েছে। বিলে পৌরসভার সচিবের পদের নাম বদলে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে। 

বিদম্যান আইনের মেয়র ও কাউন্সিলদের অপসারণ সংক্রান্ত ধারায় নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-মেয়র অথবা কাউন্সিলর তার নিজ পদ হইতে অপসারণযোগ্য হবেন, ‘সরকার কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশ পালন করতে ব্যর্থ হন।’ 

বিদ্যমান আইনে প্রশাসক নিয়োগ এবং পৌরসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে। বিলে এই ধারায় পরিবর্তন করে বলা হয়েছে- পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন পরিষদ গঠনের আগ পর্যন্ত কাজ চালানোর জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেবে সরকার। সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা সরকার উপযুক্ত মনে করে এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ দেবে।

বিলে পৌরসভার পরিষদ বাতিল সংক্রান্ত ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিক্রমে ১২ মাস বেতন বকেয়া থাকলে পরিষদ বাতিল হবে। নতুন পৌরসভা গঠন হলে বা কোনো ইউনিয়নের অংশবিশেষ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হলে বিলুপ্ত ইউনিয়ন বা বিলুপ্ত অংশে কর্মরতদের পৌরসভায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে বিলে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান আইনে পৌরসভার মেয়াদ পাঁচ বছর শেষ হওয়া সত্বেও নতুন পরিষদ প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পূর্বের পরিষদ দায়িত্ব পালন করতে পারে। অনেক সময় পৌরসভার মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন কারণে রিট মামলা বা অন্য কোনো মামলা করে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ অনির্ধারিত সময়ের জন্য পৌর প্রশাসন পরিচালনা করে। ফলে আইনের এ শর্তটি সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার ক্ষেত্রে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন।

বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে। প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। নতুন পৌরসভা গঠনের পর প্রথমবার নির্বাচনের আগে একজন প্রসাশক নিয়োগ করা যেতে পারে, সেটা জরুরি প্রয়োজনে।  আমলাতন্ত্র দিয়েই যদি কাজ হতো তাহলে স্থানীয় সরকারের কোনো প্রয়োজন ছিল না।

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত। স্থানীয় সরকারগুলোর একটি বিরাট অংশের প্রতিনিধি বিনাভোটে নির্বাচিত, বিরাট অংশ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে নির্বাচিত। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মানুষ এমন স্থানীয় সরকার আশা করেনি।

তিনি বলেন, সংবিধানে সকল পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কথা বলা আছে। তিনি এটাকে বাকশালী পদ্ধতি চালুর চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এখন আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। জনগণকে সেখানে অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভিন্নমতের কেউ সেখানে না গেলে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে, এই উদ্দেশ্যে এই আইন করা হচ্ছে।

জাপার পীর ফজলুর রহমান বলেন, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার কথা সেখানে অনির্বাচিত কেউ বসতে পারবেন না। এটা সংবিধানের স্পিরিট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত সরকার এ কারণে এটা রাখা হয়নি। সেখানে কেন স্থানীয় সরকারে অনির্বাচিত ব্যক্তিকে বসানো হবে। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জনের মতামত নিয়ে আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখার বিষয়টি যৌক্তিক। বিভিন্ন কারণে অনেক সময় নির্বাচন করা নিয়ে আইনগত জটিলতা তৈরি হয়। অনেকে এর সুযোগ নিয়ে থাকেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত