সরকারকে দক্ষ ওঝা হতে হবে
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২১, ১১:১৭ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০২
সরকারি চাকুরেদের সম্পদের হিসাব প্রশ্নে সরকার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে, এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ১০ আগস্টের একটি দৈনিকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা- ১৯৭৯ অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের বিধান থাকলেও এ বিষয়ে কোনো তদারকি না থাকায় তা কেউ মানছে না। ফলে এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারি অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকুরেদের সম্পদের হিসাব নিতে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন পত্রিকাটিকে বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ বছর পর পর সম্পদের বিবরণী দাখিলের নিয়ম আছে। এতদিন সেভাবে হয়তো মানা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা আর ছাড় দেব না। বিধিমালাটি কার্যকরের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী দাখিল ও স্থাবর সম্পত্তি অর্জন কিংবা বিক্রির নিয়ম মানতে হবে। ইতিমধ্যেই সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্পদের হিসাব এখন থেকে নিয়মিতই দিতে হবে। তাদের আয়করের মতো প্রতি পাঁচ বছর অন্তর হিসাব দিতে হবে।
সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক সন্দেহ নেই। সরকোরি প্রশাসনে কর্মরতদের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। ১৯৭৯ সালে প্রণীত এই আইনটি যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় সরকারি অফিসসমূহে দুর্নীতি যে মাত্রা ছাড়িয়েছে তা না বললেও চলে। কেউ জবাবদিহির আওতায় নেই। স্বেচ্ছাচারিতার চরম সীমায় ওঠা এক শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে নামে-বেনামে গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। শুধু দেশে নয়, তারা চোরাই পথে দেশের অর্থ পাচারও করে দিচ্ছে বিদেশে। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম বা কানাডার বেগমপাড়া এদেরই সৃষ্টি। স্বাস্থ্যের কেরাণী আবজাল-রুবিনা দম্পতি কিংবা মালেক ড্রাইভার এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
তবে শুধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিলেই চলবে না। তাদের পোষ্য অর্থাৎ স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-জামাতা-পুত্রবধ-ভাই-বেরাদর শ্বশুর-শাশুড়িসহ স্বজনদের সম্পদের হিসাবও নিতে হবে। কেননা, দুর্নীতিবাজরা অর্জিত সম্পদের দায় এড়ানোর জন্য স্বজনদের নামে সম্পদ গড়ে থাকে। কখনো কানো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সম্পদর বিষয়ে অনুসন্ধান করলেই দেখা যায় ওগুলো তার নয়, স্ত্রী কিংবা শ্বশুরপক্ষীয় কোনো আত্মীয়ের। ওই আত্মীয়-স্বজন যে আসলে দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচার ঢাল তা এক্ষনে আর না বোঝার কোনো কারণ নেই।
একই সাথে ব্যবসায়ীদের দিকেও সরকারের নজর দেওয়া উচিত। ব্যবসা-বানিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি ও দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে সরকার তাদেরকে নানা ধরনের ছাড় ও সুযোগ দিয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী আমদানি-রফতানিতে শুল্ক ফাঁকি, আয়কর ঠিক মতো না দেয়া, ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার মাধ্যমে প্রতি বছর সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করে চলেছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবে সৃষ্টি হয়েছে এক অরাজক পরিস্থিতি। যদি শুল্ক, ভ্যাট, আয়কর সঠিক হিসাব মতো আদায় হতো, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো কয়েকগুণ শক্তিশালী হতে পারত।
আমরা মনে করি দেরিতে হলেও সরকার একটি শুভ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এর সফলতা নির্ভর করছে কার্যকর কতটা হয় তার ওপর। কারণ ভুলে গেলে চলবে না, যারা আইনটি কার্যকর করবেন তারাও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারি। এক্ষেত্রে ভুত তাড়ানো সর্ষের মধ্যেই যে ভুতের বাসা নেই তা কে বলবে। সুতরোং সরকারকে অবতীর্ণ হতে হবে দক্ষ ওঝার ভ‚মিকায়, যাতে ওইসব ভুত তাড়ানো সম্ভব হয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত