সমাজের নীচের তলার মানুষদের কাগজে-কলমে করের আওতায় রাখা কিছুটা হাস্যকরও বটে

  ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২২, ১৪:১২ |  আপডেট  : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭

সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেট নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও মতামত ভাল করে দেখার সুযোগ হয়নি। তবে একটি বিষয় চোখে পড়ায়, তা নিয়ে ভাবছিলাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম এত বাড়লেও করমুক্ত সর্বনিম্ন আয় বার্ষিক তিন লাখ টাকাতেই অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

আমার ড্রাইভার, যে বাচ্চা বয়স থেকেই আমার বাসায় থেকে পড়ালেখা করেছে, সে এখন স্ত্রী এবং একটি নবজাত সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় সংসার চালাচ্ছে। জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে দেখে গতকালই তার সংসার খরচের হিসাব নিলাম। দেখলাম যে বাসা ভাড়া, স্ত্রী ও বাচ্চার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ বাদ দিলে তার বেতন দিয়ে ন্যূনতম খাবার খরচ মেটানো প্রায় অসম্ভব। সেই হিসাব অনুযায়ী- তাৎক্ষণিক তার বেতন বাড়িয়ে দিলাম। মুশকিল হল, এখন যে সে আয় করের আওতায় এসে গেছে, তা তার মাথায় ঢুকছে না। আমার আয়করের রিটার্ন উকিলের অফিসে পৌঁছে দেবার বাইরে বেচারার আয়কর সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নাই।

মজার ব্যাপার হলো- বাজেট প্রস্তাবের আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, বেতনভোগী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতনের অতিরিক্ত যাতায়াত, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি বাবদ মোট ভাতার করমুক্ত পরিমাণ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দশ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভাবছি আমার ড্রাইভারকে বলব- একজন আয়কর উকিলের পরামর্শ নিতে- কী করে আমার কাছ থেকে একটা নিয়োগপত্র নিতে পারে যাতে ওই সব করমুক্ত ভাতা দেখিয়ে সে আয়করের আওতার বাইরে থাকতে পারে।

লাখ লাখ উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষের কর ফাঁকি বা কর প্রশাসনের দূর্নীতি রোধের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে সমাজের এই নীচের তলার মানুষদের কাগজে-কলমে করের আওতায় রাখা কিছুটা হাস্যকরও বটে। আয়করের হার নির্ধারণ করতে প্রথম কত টাকা পর্যন্ত করের হার শূন্য ধরা হবে, আর সর্বনিম্ন কত আয় হলে আয়করের আওতায় আসবে এ দুটি বিষয়কে পৃথক করা দরকার।

লেখক:  অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

 

 সৌজন্য- দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত