সভ্যতার দায়!
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২১, ২০:১২ | আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৮
সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান,
সঙ্কটের কল্পনাতে হয়ো না ম্রিয়মাণ।
মুক্ত করো ভয়,
আপনা মাঝে শক্তি ধরো,
নিজেরে করো জয়।
দুর্বলেরে রক্ষা করো, দুর্জনেরে হানো,
নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানো।
মুক্ত করো ভয়,
নিজের ’পরে করিতে ভর না রেখো সংশয়।
ধর্ম যবে শঙ্খরবে করিবে আহ্বান
নীরব হয়ে, নম্র হয়ে, পণ করিয়ো প্রাণ।
মুক্ত করো ভয়,
দুরূহ কাজে নিজেরে দিয়ো কঠিন পরিচয়।
এ সঙ্গীতটা ছিল আমার চলার পথের পাথেয়।
টানা চব্বিশঘন্টা পর আবারও ফিরলাম ফেসবুক নামের বন্ধু সমাবেশে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওই মুহূর্তে সভ্যতার প্রতি প্রচণ্ডরকমের বিবমিষা জেগে ওঠেছিল মনে। ঘেন্নায় শরীর রি রি করে ওঠেছিল হিংস্র বর্বর মানুষগুলোর প্রতি। গা ঘিনঘিন করছিল, চারপাশটায় কুৎসিত মনোভাবাপন্ন সুন্দর অবয়বের কিছু পরিচিত নারীমুখ ভেসে ওঠেছিল, কিছু বিভৎস চিন্তার পুরুষমুখ চোখে ভাসছিল। সহ্য করতে পারছিলাম না, তাই বিভ্রান্তি এড়াতে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলাম। রাগের মাথায় মানুষ হিতাহিতজ্ঞানশূন্য থাকে। এ পরিস্থিতিতে মানুষ ভুল কথা যেমন বলে ফেলে, ভুল আচরণও করে বসে। ঠিক এ কারণেই ফেসবুকিং বিরতি ঘটিয়েছিলাম।
সহজাত স্বভাব অনুযায়ী আমি মানুষ খুঁজে বেড়াই। সেই মানুষ, যার মান এবং হুস দুই-ই আছে। আমার পরিচিত জগতে এমন অনেক দুপেয়ে মানুষ আছেন, যাঁরা অবয়বে মানুষ, মননে মানুষ না। দীর্ঘদিন কাছাকাছি থাকার পরও তাঁরা আমার কাছের মানুষ হতে পারেননি, যদিও তাঁরা সেটা আদৌ টের পান কি না আমি জানিনা। আবার কয়েক দিনের পরিচয়েও কেউ হয়ে ওঠেন অনেক কাছের।
মানসিক চাপ কমাতে টানা চব্বিশঘন্টা ফেসবুকে আসিনি, বিপরীতে লিখেছি অনেক। এই না আসায় বিশেষ প্রাপ্তি ঘটেছে। একজন উদার মনোভাবাপন্ন মানুষ, যিনি আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছেন আর বরাবরের মতো তিনিও একজন পুরুষ। তিনি আমার চিন্তার জগতে এক আলোড়ন তুলে দিয়েছেন। মন শান্ত হলে আমি এমনিতেই ফিরতাম। আজ সকাল থেকে তাঁর লেখা পড়ছি আর জানছি সভ্যতার আলো যেমন দ্যুতি ছড়ায়, তেমনি কলঙ্কের ছায়াও ফেলে। আলো যতো ঝলমল করে অন্ধকার ততো মুখ থুবড়ে পড়ে। আলোর ('প্রথম আলো' নয়) পথের যাত্রীকে তাই কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েই এগুতে হয়। সুচতুর ব্যক্তি মাত্রেই অন্ধকারের সাথে মিতালি করেই আলো নিয়ে খেলা করেন। ভাবেন, কেউ বুঝেনা। এরাই বেশি ভয়ংকর। এদের চিনতে হবে, চেনাতেও হবে। এটাই সভ্যতার দায়।
এবার বলতে পারেন, আমি কেন উদার মনোভাবাপন্ন এই মানুষটিকে নিজে রিকু পাঠাইনি। না পাঠাইনি, এজন্য পাঠাইনি যদি গৃহীত না হয় তবে মন খারাপ হবে। ইতিপূর্বে সেলিব্রেটি (প্রায়শই বইমেলায় নানা ঢংয়ের পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় অটোগ্রাফ দেয়ার ছবি দেখতাম) এক কবিকে রিকু পাঠালে যথারীতি তিনি এক্সেপ্ট করেন। মাস যেতে না যেতেই দেখি তিনি পোস্ট দিচ্ছেন তাঁর লিস্টে থাকতে হলে লাইক/কমেন্ট করতে হবে। বুঝলাম, তিনি কোয়ালিটি থেকে কোয়ান্টিটিতেই বিশ্বাসী আর মনেমনে প্রমাদ গুনছিলাম কবে জানি আমি ছিটকে পড়ি। কিছুদিন পরে সত্যি-ই তাই ঘটেছিল। যাকগে, সেটা সমস্যা না। পরে একদিন শুনি তিনি প্রবাসীদের অমর্যাদা করে এক মন্তব্য করে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। এরপর গুনিজনদের ফলোয়ারই কেবল হই কিন্তু রিকু পাঠাতে সাতবার চিন্তা করি। আমি অপ্রয়োজনীয় লাইক/কমেন্টে যেমন বিশ্বাসী না, তেমনি অপ্রয়োজনীয় লাইক/কমেন্ট করিও না।
টানা কয়েকঘন্টা ফেসবুকে না থাকায় আমার লাস্ট পোস্ট পড়ে অনেকেই ভুলভাল আকাশকুসুম চিন্তা করে বসে আছেন। আসলে গতকালের লাস্ট পোস্টের আগের পোস্টটা রাগান্বিত মনোভাব নিয়ে পোস্ট করেছিলাম বলে লক করে দিয়েছিলাম, আর তাই এ বিভ্রান্তি। মাফ করবেন। বিভ্রান্তি এড়াতে আবার আনলক করেছি।
যাহোক, আমি মানুষ খুঁজি,
মানুষ ভজি,
আর মানুষের মাঝেই ঈশ্বর খুঁজি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত