সঞ্চয়পত্রে মুনাফার কর আগের জায়গায় ফিরছে, দিতে হবে না বাড়তি কর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১৯:২০ |  আপডেট  : ১১ মে ২০২৪, ২০:৪৬

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার কর আগের জায়গায় ফিরছে। অর্থাৎ বাড়তি কর দিতে হবে না। ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগ উপকৃত হবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই আয়ের একমাত্র উৎস, তারা বেশি উপকৃত হবেন। আর যাদের সঞ্চয়পত্র ছাড়াও অন্যান্য আয় রয়েছে, তাদের দিকে একটু বেশি নজর দেয়া হবে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে এনবিআর। মন্ত্রী অনুমোদন করলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সূত্রমতে, নতুন আয়কর আইনে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাকে করদাতার আয় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পুরোনো আইনে মুনাফার অর্থ করদাতার আয়ের সঙ্গে যুক্ত হতো না, শুধু মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হতো, যা করদাতার চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচিত হতো। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া মুনাফার ওপর আর কোনো কর দিতে হতো না। নতুন আইনে একই হারে উৎসে কর কাটলেও অন্য (চাকরি, ব্যবসা, বাড়িভাড়া প্রভৃতি) আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা যোগ করে করদাতার চূড়ান্ত করদায় নির্ধারণ করার বিধান রাখা হয়েছে। এ কারণে ক্ষেত্রবিশেষে চলতি করবর্ষ থেকেই করদাতাদের বাড়তি কর দিতে হবে।

এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মূলত সঞ্চয়পত্রে শৃঙ্খলা আনতে নতুন আয়কর আইনে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাকে করদাতার আয় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা একজন করদাতার একমাত্র আয়। যেমন অবসরপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের ক্ষেত্রে নতুন আইনে আনা পরিবর্তন সমস্যা হবে না। আবার অনেকের দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছে। তাদের অন্যান্য আয়ও রয়েছে। তাদের সঞ্চয়পত্রের আয় থেকে সরকার সঠিকভাবে কর পায় না। সেজন্য নতুন আইনে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে কর আদায় বাড়বে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যাদের আয় বেশি, তাদের বেশি ট্যাক্স দিতে হবে। কারণ করযোগ্য আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা যোগ করলে করদাতার করযোগ্য আয় বেড়ে যাবে। ফলে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের স্তর (সø্যাব) পরিবর্তন হয়ে করদাতা ওপরের স্তরে চলে যাবে। এতে বাড়তি কর দিতে হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রের কর পুরোনো আইনে রাখতে বিভিন্ন মহল থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা ছাড় দিতে আমরা কিছু সুপারিশ অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি। অনুমোদন হলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে আয়কর রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকার বা আয়কর সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার দুই শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এসব কড়াকড়ির প্রভাবে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে এসে ঠেকেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে এই অর্থবছরে যা বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে তিন হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে সরকার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে একক মাস হিসেবে জুনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ছয় হাজার ১৩৯ কোটি টাকার। বিপরীতে ওই মাসে মূল ও মুনাফা বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে ছয় হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এক মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মক (নেগেটিভ) ২৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনও তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত