সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আসবেই সতর্কবার্তা বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার
প্রকাশ: ৬ মে ২০২১, ১০:৫২ | আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:৩৬
ক্রমশ আতঙ্ক বাড়িয়ে চলা দ্বিতীয় ঢেউতেই ক্ষান্ত হবে না করোনা সংক্রমণ, আসবে তৃতীয়ও। বুধবার এমনটাই জানাল কেন্দ্র। করোনার মারাত্মক ভাইরাস ‘সার্স কোভ-টু’ লাগাতার চরিত্র বদল করছে। আরএনএ গোত্রের ভাইরাসের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যই তাই। তবে যে হারে প্রতি মাসে অন্তত দু’বার ভাইরাসের মিউটেশন হচ্ছে, একইসঙ্গে জিনোম সিকোয়েন্সে মিলছে নানান ভ্যারিয়েন্টস, তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয় বলেই বুধবার মন্তব্য করেছেন মোদি সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা অধ্যাপক বিজয় রাঘবন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, এটি অত্যন্ত কঠিন সময়। দেশজুড়ে করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, তারপরেও তৃতীয় ঢেউ অনিবার্য। তবে তা ঠিক কবে আসবে, এখনই নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। কিন্তু আসবেই। তিনি বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা মিসেলস যেমন পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়নি, করোনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। তাই সংক্রমণের গতি কমাতে যেমন কোভিড বিধি পালন করতেই হবে, একইভাবে লাইফস্টাইলও বদল করতে হবে।
যদিও তিনি বলেছেন, নতুন মিউট্যান্টের ভাইরাস দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম হলেও তা এড়ানোর রাস্তা একই। মাস্ক, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, ভিড় এড়ানো। কারণ, মানুষই এই ভাইরাসের বাহক। একজন মানুষ থেকেই অন্যের শরীরে সংক্রমণ হচ্ছে। বিশিষ্ট এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘গত বছর অক্টোবর মাসে সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে। কিন্তু আমদের গাছাড়া মনোভাবেই সংক্রমণ ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। তারই মধ্যে এসেছে নতুন ভ্যারিয়েন্টস। তাই টিকা নিন, সাবধানে থাকুন। অহেতুক মেলামেশা, ঘোরাফেরা বন্ধ করুন। যতটা সম্ভব পরিবারের সঙ্গে নিরাপদে থাকুন।’
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের ডিরেক্টর ডাঃ সুজিত সিং জানান, যে হারে ব্রিটেন, ব্রাজিল, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকার নানা ভ্যারিয়েন্টস ভারতেও দেখা যাচ্ছে, তাতে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের দিকে এখন সবচেয়ে বেশি নজর রাখা হচ্ছে। কারণ, ভাইরাসের ইউকে ভ্যারিয়েন্টস যেমন ৫০ শতাংশ সংক্রমণ বাড়াতে সক্ষম, একইভাবে আক্রান্তের অবস্থাও হতে পারে মারাত্মক। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল ভেরিয়েন্টস অ্যান্টিবডির ক্ষমতা কমাতে পারে। এখনও পর্যন্ত ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করে চিন্তিত হওয়ার মতো মোট ৩ হাজার ৫৩২টি চিন্তিত মিউটেশনের সন্ধান মিলেছে। পশ্চিমবঙ্গেও ৪০টি ইউকে ভ্যারিয়েন্টস, ৯টি দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান মিলেছে বলেই জানিয়েছে কেন্দ্র।
ওদিকে, কেন্দ্র জানিয়েছে, গোটা দেশে গত এক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গ সহ ২৪ টি রাজ্যে গড় সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের বেশি রয়েছে। যা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। দেশের মধ্যে গোয়ায় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জনে এখানে ৪৮ জন করোনা পজিটিভ। পশ্চিমবঙ্গে এই হার ৩৩ শতাংশ। টানা এক সপ্তাহ সংক্রমণের হার ১০ শতাংশ থাকলেই সেই এলাকায় ন্যূনতম ১৪ দিন কড়া কন্টেইনমেন্টের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ৩১৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে বুধবার বিবৃতিতে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৭৮০ জন। ভারতে যে হারে দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (হু)। তারা বলেছে, বিশ্বের সাপ্তাহিক করোনা সংক্রমণের ৪৬ শতাংশই ভারতের। গত এক সপ্তাতে পৃথিবীজুড়ে কোভিডের কারণে যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তার ২৫ শতাংশও ভারতের।সৌজন্য-বর্তমান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত