শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪২ |  আপডেট  : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪৪

টানা পতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সোমবারও (১৩ জানুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর চলতি বছরে লেনদেন হওয়া ৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৬ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

এর আগে ২০২৪ সালজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। বাজার মূলধনের বড় পতনের পাশাপাশি মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয় বছরটিতে। ২০২৪ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১ হাজার ৩০ পয়েন্ট।

এমন দরপতনের পর নতুন বছর ২০২৫ সালে শেয়ারবাজারে সুদিন দেখা যাবে এমন প্রত্যাশায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই) ৯ দশমিক ৫০ পয়েন্ট নেমে যায়। পিই ১০-এর নিচে নেমে গেলে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু নতুন বছরেও শেয়ারবাজারে সুদিন ফেরেনি। বরং আগের মতোই দরপতনের বৃত্তেই আটকে রয়েছে শেয়ারবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন যত যাচ্ছে ততো ভারি হচ্ছে।

শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে মারাত্মক আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। বাজার ভালো করতে হলে সবার আগে এই আস্থা সংকট দূর করতে হবে। কিন্তু বাজারে আস্থা ফেরাতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ সংশ্লিষ্টদের নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজার ততো তলানিতে নামছে।

এদিকে সোমবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই সার্ভারে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়নি। নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।

তবে অল্প সময়ের ব্যবধানে দাম কমার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। এতে কিছু সময়ের জন্য মূল্যসূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয়। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টার পর আবার দাম কমার তালিকায় চলে যায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য শেষ দিকে বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের বড় পতন হয়নি।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৭টির এবং ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এরপরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় মাত্র ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৫১ পয়েন্টে নেমে গেছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৩৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ২১ কোটি ৭১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফাইন ফুডস।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আফতাব অটোমোবাইল, অগ্নি সিস্টেম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, মিডল্যান্ড ব্যাংক, রবি, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।

অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৮টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত