শুধুমাত্র চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হোন: তরুণদের প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৪১ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তরুণদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের তরুণ সমাজ, তাদেরকে যেমন আমরা শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছি, কারিগরি শিক্ষা এবং ভোকেশনাল ট্রেইনিংয়েরও আমরা সুযোগ করে দিয়েছি। পাশপাশি ডিজিটাল, অর্থাৎ কম্পিউটার ট্রেইনিং, অনলাইনে সব রকম ব্যবসা বাণিজ্য যাতে করতে পারে, সেই ব্যবস্থা, সবধরনের সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তরুণরা উদ্যোক্তা হতে চাইলে এখন যে কেউ হতে পারে। শুধু একটা পাস করেই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়া এবং নিজেরাই অন্যকে চাকরি দেওয়া, আমার তরুণ সমাজের কাছে এটাই থাকবে আবেদন’
তরুণদের উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধান বলেন, ‘নিজে কাজ করবেন, অন্যকে কাজের সুযোগ দেবেন, চাকরির সুযোগ দেবেন। নিজেরা উদ্যোক্তা হবেন। আর সেই উদ্যোক্তা করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সবধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমাদের লক্ষ্য ছিল আমরা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করবো, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করবো। কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যতগুলো গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেই গড়া। সেই বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে এক দিকে কৃষিতে যেমন আমাদের গবেষণা চলছে, অন্যদিকে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপকভাবে উদ্যোগ নিই। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বেসরকারি খাতটাকে আমি উন্মুক্ত করে দিই। কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশি, জায়গা অনেক কম। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বড় শিল্পের পাশাপাশি আমাদের ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প, বাজারি শিল্প বিভিন্ন ধরনের শিল্প গড়ে তোলা প্রয়োজন। যাতে এক দিকে কর্মসংস্থান বাড়বে। অন্যদিকে মানুষ স্বল্প পুঁজি দিয়েই উৎপাদন করতে পারবে, বাজারজাত করতে পারবে, আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করতে পারবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে যাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং শিল্প খাতের উন্নতি করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের আয় বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি আমাদের নারী সমাজ, তারাও যেন অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করতে পারে। যেটা তার সংসারে কাজে লাগবে আবার দেশের কাজেও লাগবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব সামনের দিকে। আমাদের কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। ২০০৮ সালে যখন নির্বাচনে জয়ী হই, আমাদের ইশতেহারে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম—২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আজ আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, এই সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এসএমই নীতিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করেছি। জিডিপিতে এসএমই খাতের বিদ্যমান অবদান ২৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের মধ্যে সেটা যেন ৩২ শতাংশে উন্নীত হয় তা আমাদের এই নীতিমালায় নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। আমাদের সেভাবেই উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা দরকার। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৪ দশমিক ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে।’
নারী উদ্যোক্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নারীরা এক সময় পিছিয়ে থাকত। তাদের মধ্যে খুব একটা উদ্যোক্তা ছিল না। এখন নারীরা এগিয়ে আসছে এবং তাদের অগ্রাধিকার প্রদানসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সৃষ্টির লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন রাখছে। আমি পুরুষ সমাজকে একটু পরামর্শ দিতে পারি। আপনারাও ব্যবসা করেন। আপনারা স্ত্রীর নামে যদি এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে তাকেও একটু কাজ করার সুযোগ করে দেন তাহলে সংসারের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা কিন্তু শিল্পায়নও করতে পারবে। তাতে উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হবে। সেই সুযোগটা আপনারা দেবেন, তাতে বাধা দিয়েন না।’
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমইএফ) চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত