শহীদুল্লাহ্‌ হলে মধ্যরাতে ‘সিট চাই’ বলে স্লোগান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২, ১৫:২৪ |  আপডেট  : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:২৭

ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হলে ১ হাজার ২৮৮টি আসন রয়েছে। এসব আসনের প্রায় শতভাগই হল শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নিয়ন্ত্রণে। তাদের আসন ভাগাভাগিতে সমতা না থাকার কারণে একটি পক্ষের অধীন হলে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকে গণরুমে অবস্থান করছেন। মাঝেমধ্যেই রাতে তাঁরা হল প্রাঙ্গণে ‘এক দফা এক দাবি, সিট চাই সিট চাই’ বলে স্লোগান দেন। সর্বশেষ এমন স্লোগান দেওয়া হয়েছে গত সোমবার রাতে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হলগুলোর সঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হলেও ছাত্রলীগের দুই সদস্যের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) কমিটি হয়। কমিটিতে জাহিদুল ইসলাম সভাপতি আর শরিফ আহমেদ ওরফে মুনিম হন সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকেই ছাত্রলীগের ‘প্রচলিত নিয়ম’ অনুযায়ী জাহিদুল ও শরিফ হলের কক্ষগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন।

বিজ্ঞাপণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তাঁরা বর্তমানে হলের দুটি বর্ধিত ভবনের গণরুমে থাকছেন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁরা নিয়মিত বাধ্যতামূলকভাবে অংশ নিচ্ছেন। এর বিনিময়ে তাঁদের গণরুম থেকে হলের বিভিন্ন কক্ষে ‘শিফট’ করার কথা জাহিদুল ইসলামের। কিন্তু তিনি তা করছেন না। বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কাজ হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা কিছুদিন পরপর ‘এক দফা এক দাবি, সিট চাই সিট চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। এতেও কোনো ফল হচ্ছে না।

শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানান, বর্তমানে শহীদুল্লাহ্‌ হলের ৪০ শতাংশ আসন জাহিদুলের নিয়ন্ত্রণে। আর শরিফের নিয়ন্ত্রণে ৬০ শতাংশ। জাহিদুলের কর্মীর সংখ্যা বেশি। সে অনুযায়ী জাহিদুল আসন নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারায় তাঁর পক্ষটিতে আসনসংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে এই পক্ষে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের এখনো গণরুমে থাকতে হচ্ছে। এতে তাঁদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। আসন বণ্টনে হল প্রশাসনের কোনো ভূমিকা না থাকায় তাঁরা প্রশাসনের কাছে যাচ্ছেন না।

গত সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে শহীদুল্লাহ্‌ হলের দ্বিতীয় বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থী আসনের জন্য বিক্ষোভ করেন। ওই বিক্ষোভের ভিডিও ফুটেজ প্রথম আলোর কাছে রয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা ‘এক দফা এক দাবি, সিট চাই সিট চাই’, ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, সিট আমার অধিকার’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। এর আগেও একই দাবিতে দুই দফায় বিক্ষোভ হয়েছে। সেগুলোর ভিডিও ফুটেজও এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

তবে আসনের জন্য শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়টি জানেন না ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন। প্রশাসনিকভাবে অন্য কারও হল নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই—এমন দাবি করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনেকেই এলাকার “বড় ভাই” বা পরিচিতদের মাধ্যমে হলে আসন বরাদ্দ পাওয়ার আগেই থাকা শুরু করে দেন। অনেকে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসেন। ঢাকায় থাকার সামর্থ্য থাকে না। আমরা তো তাঁদের বের করে দিতে পারি না। আসন বরাদ্দ পাওয়ার পর হলে ওঠার নিয়ম থাকলেও অনেকেই ওঠার পরে আবাসিক হন। এখন তাঁদের কে কোন সংগঠন করে বা কী করে, তা তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না৷ হলে আসনসংখ্যা ১ হাজার ২৮৮, কিন্তু থাকেন আরও বেশি।’

বিজ্ঞাপণ

যদিও হলের আসন নিয়ন্ত্রণ ও নিজের পক্ষে আসনসংকটের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেননি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিনিয়রদের অনেকে হলে আছেন। মানবিক বিবেচনায় তাঁদের একটু সময় দিতে হয়। তবে সিটসংকট দ্রুতই কেটে যাবে।’

এদিকে গণরুমব্যবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনসংকটের ফলাফল। এ ব্যবস্থায় এক কক্ষে অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কোনো কোনো গণরুমে এক কক্ষে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে থাকতে হয়। গণরুমে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের (বর্তমানে ছাত্রলীগ) রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়। সপ্তাহে চার থেকে ছয় দিন ছাত্রলীগের প্রতিটি পক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে ডেকে নেওয়া হয়। গণরুমে রেখে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিজেদের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করেন তাঁরা। কেউ তাঁদের তৈরি এই নিয়মকানুনের অবাধ্য হলে বা কর্মসূচিতে অংশ না নিলে তাঁর ‘বিচার’ হয় গেস্টরুমে। গণরুম-গেস্টরুমকে কেন্দ্র করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি আবর্তিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি আবাসিক হল আছে। এর মধ্যে ১৩টি ছাত্রদের জন্য আর বাকি ৫টি ছাত্রীদের জন্য। ছাত্রদের হলগুলোয় গণরুম-গেস্টরুমের প্রকোপ চরম হলেও ছাত্রী হলে এটি অনেকটাই কম। এই পার্থক্যের কারণ, ছাত্রদের হলে আসন বরাদ্দে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই আর ছাত্রীদের হলগুলোয় সেই নিয়ন্ত্রণ আছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত