র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা লুণ্ঠন করেনি বরং রক্ষা করে চলেছে
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:২৫ | আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭
র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা লুণ্ঠন করেনি বরং রক্ষা করে চলেছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
শনিবার ১১ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটায় কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমরা অফিসিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তবে যেটা গণমাধ্যমে এসেছে যে, র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা লুণ্ঠন করেনি, বরং মানবাধিকার রক্ষা করে চলছে।
তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় র্যাবের নয় হাজার সদস্যের ফোর্স কাজ করে যাচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে র্যাবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আজাদসহ র্যাবের ২৮ জন শহীদ হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে ও মানবাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে এক হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। বিভিন্ন সময় দুই হাজারের বেশি সদস্য আহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কিংবা মানবাধিকার রক্ষার্থে র্যাবের যে আত্মত্যাগ, তা অন্য কোনো বাহিনীর রয়েছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এলিট ফোর্স হিসেবে কিছু ম্যান্ডেটের আলোকে র্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাসবাদ দমনেই র্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আজকে র্যাবের আভিযানিক সাফল্যের কারণেই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ উত্তর বা দক্ষিণাঞ্চলসহ পুরোদেশে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। র্যাবের আভিযানের কারণেই সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে। আমরা সুন্দরবনের জলদস্যুমুক্ত তৃতীয় বার্ষিকী এবার পালন করেছি। বিশ্বের আর কোন দেশ এমন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে?
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৬ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের পুনর্বাসনে র্যাব মানবিক ভূমিকাও পালন করেছে। তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারি অনুদান ছাড়াও র্যাব নিজস্ব অর্থায়নে ঘর দিয়েছি, গরু-ছাগল দেওয়া হয়েছে। বাঁশখালির জলদস্যুদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করছে। বিশ্বে খুব কম দেশেই র্যাবের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবিকতা দেখিয়েছে। আমরা তাই দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন বা লুণ্ঠন করেনি বরং রক্ষা করে চলেছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর চৌকস অফিসার ও সদস্যদের নির্বাচন করে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে র্যাবে আনা হয়। নিজস্ব আইন ও নিয়ম কঠোরভাবে পালন করা হয়। এখানে নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।
দেশে র্যাবই প্রথম বাহিনী যেখানে নিজস্ব সদস্যের জন্য ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করেছে। এখন সরকারি চাকরিতে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, বলেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম্য বন্ধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সফল ও সার্থকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলে জানান তিনি।
করোনা মহামারিতে সন্তান তার বাবাকে, বাবা তার সন্তানকে ফেলে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে র্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
র্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তিনি বলেন, অফিসিয়ালি ডকুমেন্ট পেলে নিরীক্ষা করে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
ক্রসফায়ার ইস্যুতে র্যাবের ভূমিকা প্রসঙ্গে খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন অভিযানে র্যাবের গুলিবিনিময়ে নিহতের কথা বলা হয়। যখন আমরা মাদক কিংবা জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যাই, যখন প্রতিরোধের শিকার হই কিংবা গুলির পর আত্মরক্ষার জন্য র্যাবও গুলি চালায়। এতে করে র্যাবের এক হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। আত্মরক্ষার্থেই র্যাব গুলিবিনিময় করে। গুলি বিনিময়ের পর নির্বাহী তদন্ত হয়। যথাযথ তদন্তের পর গুলি বিনিময় যথাযথ ছিল কিনা সেটা যাচাই-বাছাই করা হয়। মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারে। যদি যথাযথ না হয় তাহলে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার [১০ ডিসেম্বর] আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট [রাজস্ব বিভাগ] ও পররাষ্ট্র দপ্তর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক [আইজিপি]।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত