রোহিঙ্গাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায় মিয়ানমার সরকার
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:২২ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪০
বিচ্ছিন্নতাবাদী ও গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য গৃহহীন রোহিঙ্গা পুরুষদের গ্রাম ও ক্যাম্প (আইডিপি) থেকে তুলে নিয়ে জোর করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এ তথ্য জানিয়েছে।
অধিকারকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা পুরুষদের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাজ্যে পাঠাতে জান্তার সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। রাখাইনের গ্রাম ও শিবিরগুলো থেকে কমপক্ষে ৪০০ রোহিঙ্গা পুরুষকে দুই সপ্তাহের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের জন্য সামরিক ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে।
ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নে সান লুইন বলেন, প্রশিক্ষণের সময়কাল মাত্র দুই সপ্তাহ। জান্তার সামরিক বাহিনী শুধুমাত্র তাদেরই মানবঢাল ব্যবহার করতে মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
ইরাবতী আরও জানায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষদের বাধ্যতামূলক কাজ করার আইন করার পর থেকে জান্তা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতাদের এবং প্রশাসকদের গ্রাম এবং বুথিডাং, মংডু ও সিতওয়ে আইডিপি ক্যাম্পে পুরুষদের তালিকা তৈরি করার জন্য চাপ দিয়েছে। প্রতিটি ছোট গ্রামের জন্য কমপক্ষে ৫০ জন পুরুষ এবং প্রতিটি আইডিপি ক্যাম্প ও বড় গ্রাম থেকে কমপক্ষে ১০০ জন পুরুষের তালিকা তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা বাসিন্দারা জানান, জান্তার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা পুরুষদের বলেছে তারা সেনাবাহিনীতে চাকরি করলে প্রত্যেককে এক বস্তা চাল, নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র এবং মাসিক ১ লাখ ৫০ হাজার কিয়াট (৪১ ডলার) বেতন পাবে।
২০১২ সালে রাখাইনে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গার জন্য একই রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়েতে ১৩টি আশ্রয়শিবির ক্যাম্প তৈরি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, এসব ক্যাম্প থেকে ৩০০ জনের একটি দল জান্তা সরকার নিয়ে গেছে। এখন আরও একটি গ্রুপ নেয়ার জন্য তাদের নামসহ আরও ৩০০ জনের একটি তালিকা দেয়ার জন্য বলেছে জান্তার সামরিক বাহিনী।
রোহিঙ্গারা বলছেন, যাদেরকে নেয়া হয়েছে তাদের জন্য আমরা উদ্বিগ্ন। এখন নতুন করে আবার তালিকা করায় আমরা ভীত। আর এই তালিকা শিগগিরই হবে।
সিত্তওয়ের একটি আশ্রয়শিবির ক্যাম্পের কাছে একটি গ্রামের বাসিন্দা রোহিঙ্গা যুবক কো আয় জানান, জান্তা সরকারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সীমা বেঁধে দেওয়া বয়সের মধ্যে থাকায় তিনি নিজে এবং তার পরিবার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। জান্তা সরকারের পক্ষে অস্ত্র তুলে সামনের সারিতে নিহত হওয়ার বদলে আমরা বরং তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আরাকান আর্মিতে যোগ দেব।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে শুরু হওয়া জান্তাবিরোধী বিদ্রোহের নেতৃত্বদানকারী ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের তিনটি জাতিগত সেনাবাহিনীর মধ্যে আরাকান আর্মি অন্যতম। যুদ্ধে জান্তার সামরিক বাহিনী রাখাইনে আরাকান বাহিনীর কাছে বড় ধরনের পরাজয় বরণ করছে। এ ছাড়াও দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জান্তার সামরিক বাহিনীর বড় ধরনের পরাজয় ঘটে।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত