রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারিতে সম্মত ইইউ
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ০৮:২১ | আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১০
ইউক্রেনে অভিযান চালানোয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৪তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। বৃহস্পতিবার কূটনীতিকেরা বলেছেন, এর মধ্যে ইইউ জলসীমায় রুশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আবারও রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত। এদিকে রাশিয়ার দুটি জ্বালানি ডিপোতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এই ড্রোন হামলার পর তেলের ডিপোতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। নতুন করে রাশিয়ার ৪৭টি সংস্থা ও ৬৯ ব্যক্তিকে ইইউর নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা হলো। এর ফলে রাশিয়ার অন্তত ২ হাজার ২০০ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। খবর রয়টার্স, এপি।
আগামী সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিলিত হলে প্যাকেজটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কূটনীতিকেরা বলেছেন, ইইউ দেশগুলো অনুমোদিত সংস্থার তালিকায় ট্যাংকার যুক্ত করেছে। সেই সঙ্গে যে দুটি রাশিয়ান মালিকানাধীন জাহাজ উত্তর কোরিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোও নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে।
এদিকে, আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত ইইউ প্রেসিডেন্সির দায়িত্বে রয়েছে বেলজিয়াম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বেলজিয়াম জানিয়েছে, বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার প্রভাবকে সর্বাধিক করে তুলবে এই নিষেধাজ্ঞা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক চলছে দেশগুলোর মধ্যে। জার্মানির বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত কমিশনের একটি প্রস্তাব ভেস্তেও গেছে। তবে নতুন এই পদক্ষেপে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ইইউ দেশগুলোর সহায়ক সংস্থাগুলোর পণ্য পুনরায় রাশিয়ায় রপ্তানির বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বহুমুখী ব্যবহারের প্রযুক্তি প্রবাহও বন্ধ করা হয়েছে। যেমন—ওয়াশিং মেশিন চিপকে রাশিয়া সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে মস্কোর ওপর ১৪ দফায় নিষেধাজ্ঞা দিল ইইউভুক্ত দেশগুলো।
এদিকে রাশিয়ার দুটি জ্বালানি ডিপোতে সন্দেহজনক ড্রোন হামলার পর আগুন ধরে যায়। বৃহস্পতিবার এই হামলা হয়। সম্প্রতি রাশিয়ার তেলশিল্পের ওপর ইউক্রেনের ধারাবাহিক হামলার অংশ হিসেবে এই ড্রোন হামলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাম্বভ অঞ্চলের গভর্নর মাক্সিম ইয়েগোরভ জানান, মস্কোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্লাটোনোভস্কায়া জ্বালানি ডিপোতে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলার পর আগুন ধরেছে। ইয়েগোরভ আরও জানান, এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তবে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, একই জ্বালানি ডিপোর দ্বিতীয় একটি রিজার্ভারেও আগুন ধরে যায়। স্থানীয় জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য ড্রোন হামলার সতর্কতা জারি করেছে এবং সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকতে ও খোলা স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এর আগে রাশিয়ার উত্তর ককেশাস অঞ্চলের আদ্যগেয়ায় আরেকটি জ্বালানি ডিপোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে আগুন ধরে যায়। তবে সেই আগুন ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে আঞ্চলিক প্রধান মুরাত কুম্পিলভ টেলিগ্রামে জানিয়েছেন। রাশিয়ার বিভিন্ন বড় জ্বালানি ডিপোতে ড্রোন হামলার ঘটনা বেড়েছে। যদিও তেল শোধনাগারগুলোর ওপর হামলার সংখ্যা কমেছে।
ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনাগুলো তাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তু। কারণ এগুলো ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার যুদ্ধে ভূমিকা রাখছে। ইউক্রেনীয় শহর ও অবকাঠামোতে রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এই আক্রমণগুলো ন্যায্য বলে দাবি করছে কিয়েভ। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলে রাশিয়ার হামলায় জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন জন শ্রমিক আহত হয়েছেন এবং কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাশিয়ার আজভ শহরের তেল সংরক্ষণের কয়েকটি ট্যাংকে ড্রোন হামলার পর আগুন ধরে যায়। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ) এই হামলা পরিচালনা করেছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সূত্র। বুধবার স্থানীয় জরুরি সেবা বিভাগের তথ্যমতে, ঐ আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি এবং প্রায় দেড় দিন ধরে জ্বলছে। রাশিয়ার প্রায় ৩০টি বড় তেল শোধনাগার রয়েছে। এগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হলে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া দেশটিতে গ্যাসোলিন ও ডিজেলের মতো বিভিন্ন তেলপণ্য সংরক্ষণকারী শত শত জ্বালানি রিজার্ভার রয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত