রাজনৈতিক দলগুলোর অগণতান্ত্রিকতার প্রতিচ্ছবি দেশের অগণতান্ত্রিকতায়

  অভিজিৎ বড়ুয়া অভি

প্রকাশ: ৬ জুন ২০২৩, ১২:৪০ |  আপডেট  : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:০২

মাদের দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পরে দলটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেও দলটির নেতৃবৃন্দ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পাকবাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত হয়। তবুও দলটি নিশ্চিহ্ন হয়নি। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পরেও তৎকালী সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান  আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের সব চেষ্টায় করেন। এরপর শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলটির হাল ধরেন। দলটিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়ে দেশকে একটি উন্নয়নের ধারায়  নিয়ে আসেন। কিন্তু দলটিতে কি গণতন্ত্র আছে? যদিও তারা দাবী করে যে, দলটি একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দল। কিন্তু আমরা দেখতে পাই দলটির সকল সিদ্ধান্ত সভাপতির কাছ থেকে আসে, তার কথায় চূড়ান্ত । শেখ পরিবারের বাহিরে কেউ দলটির প্রধান হতে পারবেন তার সম্ভাবনা এখনো তৈরি হয়নি বা অদূর ভবিষ্যৎ এ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। দলীয় প্রধানকে সন্তুষ্ট ও শেখ পরিবারের কথা বলে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে তোষামোদকারী সকল শ্রেণীর মধ্যে লক্ষণীয়। যা একটি গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
 
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। সামরিক ছত্রছায়ায় গঠিত দলটির প্রধান জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আছে। এরপর একটি সামরিক বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে জিয়ার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলটির হাল ধরেণ। এবং দলটিকে একটি গণতান্ত্রিক দল হিসাবে উপস্থাপনের চেষ্ট করেন। কিন্তু এখানেও দলের সব সিদ্ধান্ত বেগম খালেদা জিয়ার উপর নির্ভরশীল। এরপর তার পুত্র তারেক রহমান দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রেও আমরা দলে তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসাবে দেখি। জিয়া পরিবারের বাহিরে কেউ দলটির প্রধান হতে পারবেন তার সম্ভাবনা এখনো তৈরি হয়নি বা অদূর ভবিষ্যৎ এ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের হত্যার পরে তৎকালীন সামরিক বাহিনীর জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। আমরা এই সুদির্ঘ  সময়ে জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্রের চর্চা দেখিনি। এক্ষেত্রেও এরশাদের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। বর্তমানে রওশান এরশাদ।

সুতরাং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরের অগণতান্ত্রিক চর্চা সবসময় যোগ্য শিক্ষিত সৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব গঠনের অন্তরায়। যা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ধনী শ্রেণীর ক্ষমতায় আরোহণ, আস্ফালন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, মুদ্রা পাচার, অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, সমাজে দুর্বৃত্তায়ন, কর্মক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন, অফিস আদালতে দুর্বৃত্তায়ন, প্রশাসনে দুর্বৃত্তায়নের মূল কারণ। একটি সঠিক গণতান্ত্রিক নির্বাচন তাই রাষ্ট্রে কখনই সম্ভব নয়। যা দেশকে কখনই গণতান্ত্রিক একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়াতে দেবে না। প্রশাসন থেকে সচিব পর্যায় ও রাষ্ট্রের পরিচালানা সর্বক্ষেত্রেই এবং সমাজের সকল পর্যায়ে যোগ্য সৎ ব্যক্তি ‍যোগ্য পদ থেকে বঞ্চিত। রাজনৈতিক দলগুলোর অগণতান্ত্রিকতার প্রতিচ্ছবি দেশের অগণতান্ত্রিকতায়।
 

লেখকঃ  অভিজিৎ বড়ুয়া অভি

কথা সাহিত্যিক , কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক 

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত