রাখাইনে নৌবাহিনীর ঘাঁটি দখলে নিলো আরাকান আর্মি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:২৭ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৪৮

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনের একটি নৌ ঘাঁটি দখলে নিয়েছে দেশটির রাখাইনভিত্তিক জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এক মাসের তীব্র লড়াইয়ের পর গত সপ্তাহে তারা ওই ঘাঁটিটি দখলে নেয়।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী।

জাতিগত আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, তারা এক মাসের তীব্র লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের থান্ডওয়ে শহরের এনগাপালি বিচের পর্যটন কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত জান্তার নেভি সিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি দখল করেছে।

দ্য ইরাবতী বলছে, জান্তার শক্ত এই ঘাঁটিটি আনুষ্ঠানিকভাবে সেন্ট্রাল নেভাল ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ ডিপো (সিএনডিএসডি) নামে পরিচিত। জান্তা-বিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর দখল করা দেশটির নৌবাহিনীর প্রথম কোনও সদর দপ্তর এটি।

মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং গত বছরের জানুয়ারিতে মং শোয়ে লে গ্রামে অবস্থিত সিএনডিএসডি পরিদর্শনের সময় জেনারেল স্টাফ, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

আরাকান আর্মি বলছে, নৌবাহিনীর শক্ত এই ঘাঁটিটি দখলের জন্য তারা গত ৭ আগস্ট তাদের অভিযান শুরু করে। অভিযানের শুরুতে তারা কাছাকাছি গ্রামে ঘাঁটি রক্ষাকারী সামরিক পোস্টগুলোতে আক্রমণ করেছিল। মূলত প্রশিক্ষণ সদর দপ্তরটি রক্ষার জন্য সংঘাতপীড়িত অন্যান্য স্থান থেকে সৈন্যদের এখানে আনাসহ ১২০০ জনেরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছিল জান্তা। মোতায়েনকৃত এসব সেনার মধ্যে নৌ প্রশিক্ষণার্থীরাও ছিলেন।

আরাকান আর্মি জানায়, নৌবাহিনীর জাহাজ এবং বিমান ব্যবহার করে ঘাঁটির চারপাশে আরাকান আর্মির সৈন্যদের ওপর বোমাবর্ষণও করেছিল জান্তা।

এরপর গত শুক্রবার আরাকান আর্মি দাবি করে, তাদের বাহিনী ৪০০ জনেরও বেশি সরকারি সৈন্যকে হত্যা করেছে এবং ঘাঁটিটি থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে। নৌবাহিনীর জাহাজগুলো মৃত ও আহত জান্তা সৈন্যদের উদ্ধার করে এবং তাদের আইয়েরওয়াদি অঞ্চল এবং রাখাইনের রাজধানী সিট্যুয়েতে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

তবে সংঘর্ষের জায়গায় রেখে যাওয়া সরকারি সেনাদের মৃতদেহ কবর দেয় আরাকান আর্মির সৈন্যরা। এছাড়া থান্ডওয়ে ট্রেনিং সেন্টার হারানোর পর সিট্যুয়ের জান্তা ঘাঁটিগুলো থেকে কাছাকাছি পাউকতাও শহরে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। এতে করে সেখানকার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জাতিগত এই সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

এছাড়া উত্তর রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মংডু শহর দখল করার জন্য সপ্তাহব্যাপী আক্রমণে জান্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ অব্যাহত রেখেছে আরাকান আর্মি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক সরকারের প্রধানও তিনি।

জান্তার ক্ষমতা দখলের পরপরই বিক্ষোভ শুরু হয় মিয়ানমারে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে সেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে আসে জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। ২০২৩ সালে নভেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জান্তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে যুদ্ধে নামে গোষ্ঠীগুলো।

সেই যুদ্ধ এখনও চলছে এবং ইতোমধ্যে দেশের বড় এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা।

 

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত