যে কারণে পেছাল রায়
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১৩:৫৪ | আপডেট : ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৩
পূর্ব-নির্ধারিত সময় অনুযায়ী রোববার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা হয়নি। তা পিছিয়ে চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর ধার্য করেছেন আদালত।
রোববার (২৮ নভেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায়ের নতুন এ তারিখ ঘোষণা করেন।এদিন সকাল থেকেই রায় ঘোষণার জন্য আদালতে পূর্ণ প্রস্তুতি দেখা যায়।
নিয়ম অনুযায়ী কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে সকাল ৯টার দিকে আদালতে আনা হয়। এ সময় তাদেরকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের নিচতলায় কোর্ট হাজতে রাখা হয়।দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আসামিদের এজলাসে তোলা হয়। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটের দিকে জনাকীর্ণ এজলাসকক্ষে আসন গ্রহণ করেন বিচারক।
রায় পেছানোর ঘোষণা দিয়ে বিচারক বলেন, সাক্ষ্য ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক পর্যালোচনা করে রায় ঘোষণার জন্য আরও কিছু সময় প্রয়োজন। তাই আজ রায় ঘোষণা করা হলো না। রায় ঘোষণার হবে চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর। এই কথা বলে বিচারক আসন ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। চার্জশিটে ২৫জনকে আসামি করা হয়। আর রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয়, ৬০ জনকে।
চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে-১ স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়।
একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে। শেষ পর্যন্ত বিচার শুরুর এক বছর দুই মাসের মধ্যে পুরো কার্যক্রম শেষে গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়। ওইদিনই বিচারক রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। বিচার চলাকালে আবরারের বাবাসহ মোট ৪৬ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দী দেন।
এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে তদন্ত চলাকালে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।
গ্রেফতারদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
এই মামলার আট আসামি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
বিচার শুরুর প্রাক্কালে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত