মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২১, ১৩:২৫ | আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৪২
করোনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ‘কঠোর’ লকডাউন চলছে। সে সাথে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে সেই লকডাউন ভাঙার প্রবণতা। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে করোনায় নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা। গত ২৬ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৪৭ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। এটা একদিনে আপাত সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা। একই সময়ে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৯২। কিছুাদিন আগে যারা ‘করোনা মাকাবিলায় আমরা সফল’ বলে উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন, তাদের কপালেও এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারাই এখন বলছেন, সতর্ক না হলে সংক্রমণ ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
জনস্বাস্থ্যবিদগণ শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাকেই করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপায় হিসেবে বলে আসছিলেন। সরকারও সে কথা প্রচার করেছে ব্যাপকভাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো জনগণ সচেতন হন নি। এখনও এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে সিংহভাগ মানুষ নির্বিকার চলাফেরা করছে। সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করলেও সেই কঠোরতা তাদেরকে স্পর্শ করতে পারছে বলে মনে হয় না। ফলে প্রতিদিন আইনশৃক্সখলা বাহিনীকে দেখা যাচ্ছে পথে চলা ব্যক্তিদের কাউকে কাউকে জরিমানা করতে। তবে, এই কঠোর লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন অছে অনেকের মনেই। কঠোর বা সর্বাত্মক লকডাউন হলে সব অফিস-কলকারখানা বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু ব্যাংকসহ বেশকিছু বেসরকারি অফিস খোলা। তাহলে ওইসব অফিসের কর্মরতরা কীভাবে যাবেন কর্মস্থলে? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা কঠোর লকডাউনের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় তা অব্যাহত রাখা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
করোনার এ প্রাদুর্ভাবের মাধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আগমণ ঘটেছে ডেঙ্গুজ্বরের। ২৭ জুলাই পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ১২৩ জন নতুন আক্রান্তসহ চলতি জুলাই মাসে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ১ হাজার ৪৩০ জন রোগী। জনস্বাস্থ্যবিদগণ মনে করেন, প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকরভাবে গড়ে তুলতে না পারলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। স্মরণ থাকার কথা, দুই বছর আগে ডেঙ্গু মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। গত বছর এর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও এবার বর্ষার শুরুতেই রোগটি তার কদাকার মুখ দেখাতে শুরু করেছে।
জানা কথা, এডিস নামে একটি বিশেষ ধরনের মশার কামড়ে এই জীবানু মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে। আর সে মশা জন্ম নেয় স্বচ্ছ পানিতে। তা হতে পারে ভবনের ছাদের কিনারায় জমে থাকা বা অন্য উৎসের পানি, ফুলের টব বা শখের ছাদবাগানের গাছের গোড়ায় জমে থাকা পানি কিংবা রিফ্রিজারেটর বা এসি থেকে নিঃসরিত পানি। এমন কি পরিত্যাক্ত ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিও এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। বলা হয়ে থাকে, এক চামচ পরিমান স্বচ্ছ পানিতেও ডিম পাড়তে পারে এডিস মশা। আর সেজন্যই এই ভয়ঙ্কর রোগের হাত থেকে বাঁচতে পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিয়ে থাকেন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা। সে সাথে মশার লার্ভা নিধনের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে মশক নিধন কর্মসূচি উদ্বোধন করা হলেও তা কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন অনেক আগে থেকেই ছিল, এখনও আছে। অভিযোগ রয়েছে, ছিটানো ওষুধে ভেজাল বা নিম্নমানের কারণে তা মশার ওপর তেমন ক্রিয়া করতে পারে না। তাছাড়া নগরীর নর্দমাসমূহের কদাকার অবস্থা, বিভিন্ন ঝিল বা লেকের পচা পানি ‘মশার নিবিড় চাষ প্রকল্প’ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এসব অব্যবস্থা বিদ্যমান রেখে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যে অসম্ভব ব্যাপার তা পুনরুল্লেখ না করলেও চলে।
আমরা মনেকরি, এখন যুদ্ধ দুই ফ্রন্টে। একদিকে করোনা মহামারী, অন্যদিকে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার অশনি সংকেত। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সতর্কতাই এ দুই রোগের সর্বনাশা আক্রমণ থেকে রাজধানীসহ গোটা দেশের মানুষকে রক্ষা করতে পারে। তাই আমরা আবারো আহবান জানাই, আসুন, সবাই সতর্ক হই, সাবধানতা অবলম্বন করি। নিজ দায়িত্বে বাড়ির আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখি। মনে রাখতে হবে, রোগ-বালাই থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত