মে দিবস ও বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিক

  মোঃ সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:১৫ |  আপডেট  : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯

মে দিবস, শ্রমিকদের দাবী আদায়ের বিজয়ের দিন। কিন্তু এ দিনেও রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শ্রমিকরা বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা চরম মজুরী বৈষম্যের শিকার। মহান মে দিবস যে উদ্দেশ্যে হয়েছিল আমাদের দেশে সে উদ্দেশ্য নানা ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কাউনিয়ায় ১টি পৌরসভা সহ ৬টি ইউনিয়নে পুরুষ শ্রমিকের পাশা পাশি নারী শ্রমিকেরা কাজ করছে। বর্তমানে পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে নারী শ্রমিকের কদর অনেক বেশী হলেও বৈষম্যে থেকে তারা রেহাই পায় নি। নারী শ্রমিক হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হয়ে অতি কষ্ঠে জীবন যাপন করছে। ধান লাগানো, ধান কাটা, ধান মাড়াই, মাটি কাটা, হোটেল, রাইচ মিল, চাতাল, বিড়ি ফ্যাক্টরী, ইট ভাটা, রাজ মিস্ত্রীর জোগালী, পাথর ভাঙ্গার কাজসহ সব রকম ভারী কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা কাজ করলেও নারীরা ন্যায্য মজুরী পায় না।  অভাবের তাড়নায় কাজ করা নারীদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। বিনিময়ে মালিকরা যা দেয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। যদি কেউ মজুরী নিয়ে প্রতিবাদ করে তবে তাদের কাজ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। 

পুরুষ শ্রমিক যেখানে একই কাজ করে পায় ৫০০-৬০০টাকা সেখানে নারী শ্রমিকরা পায় ৩২০-৩৫০ টাকা। বৈষম্যের শিকার এরকম দুই নারী শ্রমিক আলবেদা বেগম ও রুপিয়া বেওয়ার সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, "জিনিস পত্রের যে দাম মালিক যে টাকা দেয়, তাতে কিছুই হয় না। যা পাই তাই দিয়ে কোন মতে বেঁচে থাকি খেয়ে না খেয়ে। একটি বে-সরকারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী জানাগেছে, এ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার নারী শ্রমিক রয়েছে, তবে করনা কালে এর সংখ্যা আরও বেড়েছে। এদের মধ্যে কিছু নারীরা ৪০টি তামাক ভাঙ্গা চাতাল, ৮৬টি মিল চাতাল, ৮টি ইট ভাটায়, ২টি জুট মিল, এবং বিভিন্ন হাট বাজারের হোটেলসহ কৃষি খামারে কাজ করে। তারা শ্রম আইনের আওতায় নেই বরং বৈষম্যের শিকার। নারী জাগরনের অগ্রদূত মহিয়সী নারী বেগম শাখাওয়াত হোসেনের জন্ম রংপুরের পায়রা বন্দ
গ্রামে। তিনি নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্ম নিয়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সেই মহিয়সী নারীর জন্মস্থানের জায়গায় নারী শ্রমিকরা আজও মজুরী বৈষম্যের শিকার। সভ্যতার বিকাশে নারীর অবদানের জয়গান শোনা গেলেও কাউনিয়া উপজেলায় নারী শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো শ্রমের মর্যদা ধুলোয় লুটিয়ে মিশে যেতে বসেছে। প্রতিবছর শ্রমিক দিবস, নারী দিসব পালিত হয়, সকল কাজে নারী পুরুষ সম-অধিকারের কথা বলা হয়। কিন্তু ন্যায্য মজুরীর ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এ বৈষম্য দূর হলে দেশের অর্থনীতি একধাপ এগিয়ে যাবে বলে বিজ্ঞজনরা মনে করছেন। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত