মেগা প্রকল্পসমূহের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে টিকা কেনার প্রস্তাব বিএনপির

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৫ জুলাই ২০২১, ১৭:০৬ |  আপডেট  : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:০৮

করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতা প্রতিরোধে মেগা প্রকল্পসমূহের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে অতিদ্রুত সরকারকে টিকা কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায়ে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে গিয়ে আজ সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ‘করোনার ভাকসিন সংগ্রহ-বিতরণ-পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কমিটি’র আহবায়ক সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের প্রতি এই দাবি জানান। বিএনপির ‘করোনার ভাকসিন সংগ্রহ-বিতরণ-পর্যবেক্ষন সংক্রান্ত কমিটি’র উদ্যোগে সারাদেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় টেউ মোকাবেলায় সরকারের কার্য্ক্রম বিষয়ে তুলে ধরতে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন হয়।

তিনি বলেন, আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ সংকটকে জাতীয় পর্যায় এক নাম্বার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। টিকা ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অন্যখাত থেকে বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর বরাদ্ধকৃত অর্থ ডাইভার্ট করে টিকা ক্রয় করা অতি জরুরী।”

পৃথিবীর বিভিন্ন যে সোর্স আছে ঔষধ কোম্পানিগুলো থেকে টিকা সংগ্রহ করা দরকার। অতিশিগগরিই। এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ নয়, কোটি কোটি টিকা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে করোনা ৪/৬ মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, টিকা ক্রয় আমরা বিরোধী দল করতে পারবো না, এটা সরকারকেই করতে হবে। যদি সরকার না পারে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। সেই দায়-দায়িত্ব গ্রহন করে সরকারকে প্রয়োজনে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা পারবে তারা এদেশের জনগনকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবে।”

তিনি বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চিয়তা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতায় বিএনপি উদ্বেগ প্রকাশ এবং তাদের উদাসিনতায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনা, টিকা সংগ্রহেরে রোডম্যাপ এবং টিকাদান কর্মসূচির ভবিষ্যত পদক্ষেপ সম্পর্কে সকল তথ্য জনগনের সামনে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছে।”

বিএনপি বিশ্বাস করে দেশের জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে অতি শিগগিরই টিকা প্রদানের মাধ্যমেই একমাত্র করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে সরকারকে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের কার্য্কর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে এবং জনগনকে তা অবহিত করতে হবে।”

সাবেক মন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, এই করোনা নিয়ে খামখেয়ালী, দুর্ণীতি ও যে ব্যর্থতা সরকার দেখিয়েছে তার ফলে আজকে প্রত্যেকদিন মানুষ জীবন দিচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছে বাংলাদেশে এবং ৮ হাজার ৬শ উপরে শনাক্ত হয়েছে। প্রত্যেকদিন একই অবস্থা। এটা কমার কোনো লক্ষন আমরা দেখতে পারছি না। করোনা প্রতিরোধে টিকা হচ্ছে একমাত্র উপায়। এই টিকা নিয়ে সরকারের লুকোচুরি ও ব্যর্থতা জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।”

আমরা বলব, অতিদ্রুত টিকা সংগ্রহ এবং টিকা দান কর্মসূচিকে স্বচ্ছ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। আমরা আগেও বলেছি এজন্য জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে এদেশের দলমত নির্বিশেষে সকল জনগনকে এই একটি কাজে একত্রিত করে অগ্রসর হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নাই বলে আমরা মনে করি। আজকে পত্র-পত্রিকায় দেখবেন করোনা সংক্রমনের ব্যাপারে যে খবরাখবর সবই হতাশার খবর। আমরা আশার খবর শুনতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা সকলে কাজ করতে চাই। সরকারকেও সেইভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”

খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশ ইতিমধ্যে করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে সেসব দেশের প্রায় ৭০/৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা প্রদান করতে সমর্থ হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সরকারের টিকা কুটনীতিতে চরম ব্যর্থতা, টিকা ক্রয়ে অনিয়ম, লোভ ও হঠকারিতার কারণে দেশে টিকাদান শুরুর পর থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৬ জন। এই হিসেবে গত ৬ মাসে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় অতি সামান্য সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে তাতেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত অগ্রাধিকার তালিকা অনুসরণ করা হয়নি।

সরকার ভারতের থেকে সেরাম ইনস্টিটি্উট থেকে তিন কোটি ডো্জ টিকা ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেছিলেন এবং সম্পূর্ণ টিকা ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেছিলেন এবং টিকার সম্পূর্ণ মূল্য অগ্রিম প্রদানচজী করেছিলো। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট ২ দফায় ৭০ লাখ ডেজ টিকা সরবারহের পর বন্ধ করে দেয়ায় অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকারের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা পড়েছেন ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ।”

ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকার প্রসঙ্গ টেনে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, সিনোফার্মের ২০ লাখ ও মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকাসহ এই পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশে টিকা এসেছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ডোজের বেশি। বর্তমানে দেশে মাত্র ৫৯ লাখ ডোজের বেশি টিকা মজুদ আছে। অদুর ভবিষ্যতে টিকা সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। ১৮ কোটি মানুষের দেশে উল্লে্খিত সংখ্যক টিকা কত অপ্রতুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।”

বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত টিকা্ লাগে কেনা হবে। কিন্তু কোথা থেকে ক্রয় করা হবে, কবে নাগাদ ক্রয় করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখেন নাই। কোভিড-১৯ অতিমারীর শুরু থেকে সরকারের রাখঢাক, সমন্বয়হীনতা, অতিকথন ও দুর্নীতি জনগনকে হতাশ করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে, সরকার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।”

তিনি বলেন, সরকার ও তার মন্ত্রীরা জনগনের সাথে প্রতারণা করেছেন প্রথম থেকে। তারা বলেছেন, করোনা সংক্রমিত হবে না।কিন্তু হয়েছে। তারপরে বলেছেন, সব চিকিতসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশের জনগনের কাছে পরিস্কার যে, সরকার তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে।”

আসলে যেহেতু এই সরকার জনগনের সরকার নয়। সেজন্য তাদের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই এবং করোনা নিয়ে তারা যে দুর্নীতি করেছে তা দেশের মানুষ জানে। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের কোনো মাথা ব্যথা ছিলো, তাদের উদ্দেশ্যে ছিলো জনগনের দুঃসময়কে পূঁজি করে সরকার ও তার তল্পিবাহকরা কিভাবে লাভবান হবে।”

করোনা সংক্রামণ মোকাবিলায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ড্যাব) এর হটলাইনে চিকিসা সেবা, বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার চিকিতসা সামগ্রি প্রদান, সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাইফ্লো-নেজাল ক্যানোলা সরবারহ, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করার কার্য্ক্রম তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, গতকালও ডব্লিউএইচও ডিজির যে রিকমন্ডেশন অর্থাত আপনাকে মিনিমাম শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে হবে। যদি এটা করা যায় তাহলেই আপনি ইউমুনিটি অর্জন করা, অর্থনীতিকে সচল রাখা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ৭০ ভাগ অর্থাত সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে যদি ভ্যাকসিনেটেড করতে হয় আপনার মিনিমাম ২৫ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ দরকার। এক্ষেত্রে আমাদের হাতে মাত্র দেড় কোটি বা এক কোটি ৬০ লক্ষ ভ্যাকসিন আসছে। এটি যদি আপনি প্রতিদিন দুই বা চার লাখ মানুষকেও দেন তাহলে এক কোটি মানুষকে দিতে ২৫ দিন লাগবে। যদি ভ্যাকসিন হাতে থাকে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত