আইন-শৃঙ্খলার অবনতি\ সংঘর্ষের আশংকা
মুলাদীতে ব্রীজ উদ্বোধনের আগেই চলছে বাস!

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫৭ | আপডেট : ৩ মে ২০২৫, ১১:০৮

বরিশাল জেলার মুলাদীতে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপরে নির্মিত একটি ব্রীজের সংযোগ সড়কসহ আনুসাঙ্গিক কাজ বাকি থাকতেই অবৈধভাবে বাস সার্ভিস চালূ করার অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের কারণে ব্রীজের চলমান নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্থ হওয়া ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ নতুন করে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। একইসাথে বাস চলাচলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে স্থানীয় দুটো গ্রপের মধ্যে ইতোমধ্যে সংঘর্ষের কারণে কয়েকজন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় একজন বর্তমানে মুলাদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছে। এ ঘটনায় এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপ এলাকা। মাদারীপুরের কালকিনি ও বরিশালের গৌরনদী থেকে মুলাদীতে সড়ক পথে যাতায়াতের জন্য এ উপজেলার রামারপোল ও নাজিরপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়াল খাঁ নদের ওপরে একটি সেতু নির্মাণ করা হয় ৪/৫ বছর পুর্বে। এলজিইডি’র SWBRPD প্রকল্পের আওতায় মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও দুইপাশের সংযোগ সড়ক স্লোপ প্রটেকশন ও তীর সরক্ষণের কাজগুলো বাকি ছিলো। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের SUPRP প্রকল্পের অধীনে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে শেষ পর্যায়ে আছে। ব্রীজের ক্ষতি করে যানবাহন যাতে না চলে সেজন্য দুইপাশে নির্মিত সংযোগ সড়কের মধ্যে অস্থায়ী পিলার ও ‘যানবাহন চলাচল নিষেধ’ এ ধরণের সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল রাতের আঁধারে কমপক্ষে তিনবার ওই পিলার ও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলে দেয়। একইসাথে কোন প্রকার রুট পারমিট ছাড়াাই বিআরটিসি ও সেবা পরিবহণের বাস চলাচল করাচ্ছে। বিষয়টি স্খানীয় সচেতন মহলের পক্ষ থেকে বিআরটিসি ও বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানদ্বয়কে লিখিতভাবে জানানোর পরেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এই অসমাপ্ত সড়কে ঝুঁকি নিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ব্রীজের পশ্চিমপাশে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিড়ে গিয়ে কয়েকদিন যাবৎ গোটা এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একইসাথে নির্মাণাধীন সড়কের ধুলোবালিতে সড়কের পশে অবস্থিত মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা অবর্ননীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থায় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত নাজির বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ আলমগীর হোসেন স্থানীয় এলজিইডি ও ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে বিষয়টি জানান। তাদের পরামর্শ মোতাবেক স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে তিনি গত ৫ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখ দুপুরে উপড়ে ফেলা পিলার ও সাইনবোর্ড পূনঃ স্থাপণ করেন। বিন্তু ওইদিনই বিকালে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ভারী যানবাহন চলাচলের পক্ষ নিয়ে ব্যারিকেড উপড়ে ফেলতে বাস মালিকপক্ষের লোকদের সহায়তা করে। তারা পুলিশের আস্কারায় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় বয়স্ক লোকদের সাথে চরম অসৌজন্য আচরণ করেন। এ ঘটনার জেরে একইদিন সন্ধ্যায় ভারী যানবাহন চালানো সন্ত্রাসীরা নাজিরপুর বাজারে স্থানীয় যুবদল কর্মী মাযহারুল ইসলামকে (৪৫) মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তিনি বর্তমানে মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। মারধরের ঘটনায় মুলাদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ০৫/২০২৫। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুনরায় হামলা পাল্টা হামলার আশংকা করছেন ন্থানীয়রা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বিএনপি নেতা বলেন, গত ৫ এপ্রিল মুলাদী বিএনপির আহ্বায়ক শরিয়তউল্লাহর নির্দেশে বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা বিএনপির সদস্য ফাহাদ উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একদল লোক উল্লেখিত অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটায়। শরিয়তউল্লাহ লঞ্চঘাট হাটবাজারসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিজস্ব পেটোয়া বাহিনী নিয়োগ করেছেন। তাদের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আ’লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে ব্যাপক সুয্গে-সুবিধা দিয়ে আসছেন তিনি। ফলে এ উপজেলায় বিএনপি’র ত্যাগী পরিক্ষীত নেতাকর্মীরা পদে পদে মার খাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর কয়েকজনের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, মুলাদী থানার ওসি জহিরুল আলম ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়ে যানবাহন চলাচলে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড ও অস্থায়ী ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলতে আপরাধীদের সহায়তা করে আসেেছ।
এ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক শরিয়তউল্লাহকে ফোন করলে তিনি জানান, ঈদ উলক্ষে যানবাহন চলাচল নিয়ে সেখানে কিছু ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। বিন্তু এর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। বিএনপি’র দায়িত্বে আছি, এজন্য হয়তো আমাকে জড়ানো হচ্ছে। তবে অন্যান্য বিষয়গুলো তিনি এড়িয়ে গেছেন।
ন্থানীয় নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়রাম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদলকে বিষয়টি নিয়ে ফেন করলে তিনি জানান, এই ব্রীজটি মূলাদীর সাথে যোগাযোগের জন্য বহুল প্রতিক্ষীত ব্রীজ। এলাকার জনগণের স্বার্থেই যানবাহন চলাচল করছে ব্রীজের উপর দিয়ে। এ নিয়ে ঈদের সময়ে কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করছি। বিষয়টি নিয়ে নিউজ করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
আইন-শৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব জহিরুল আলমের সাথে ফোনে কয়েকদফা যোগায়োগের চেষ্টা করেও রেসপন্স না পাওয়ায় তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত