মুন্সীগঞ্জে সাবেক এমপি’র স্ত্রীসহ আত্মগোপনে নেতাকর্মীরা, খুঁজছে পুলিশ

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১৮:১৯ |  আপডেট  : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:২৯

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব ও তাঁর স্ত্রী সাবেক পৌর মেয়র চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন আত্মগোপনে নেতাকর্মীরা রয়েছেন খুঁজছে পুলিশ। সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এ দম্পতি এখনও দেশেই অবস্থান করছেন। বিদেশে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। নিরাপদে থাকতে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছেন তারা।

অন্যদিকে বিপ্লবের বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মোহাম্মদ মহিউদ্দিনও ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে মহিউদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নেতাকর্মী ও তাঁর অনুসারী কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে প্রতিদিন হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখছেন বিপ্লব। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে কর্মরত পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা, শহরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকা একাধিক ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রটি জানিয়েছে, আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর প্রথম দিকে ফয়সাল বিপ্লব ও তাঁর স্ত্রী আফরিন শিগগিরই মুন্সীগঞ্জে ফিরে আসবেন– এমন বার্তা নেতাকর্মীকে দিয়েছিলেন। তাই এই কঠিন সময়ে নিরাপদে থেকে সার্বক্ষণিক সতর্ক এবং শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীকে।

তবে গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করায় মহিউদ্দিন পরিবারের রাজত্ব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ৪ আগস্ট সংহিস ঘটনার জেরে থানায় হত্যা মামলা এবং বিপ্লবের ঘনিষ্ঠ সহচর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সোহেলকে আটকের পর পিটুনি দিয়ে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনাকে সামনে রেখে শিগগিরই এলাকায় ফিরে আসার পরিকল্পনা পরিবর্তন করে নতুন চিন্তাভাবনা করছেন তারা। এ অবস্থায় দেশের ও নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন কৌশলে নিজেদের গুছিয়ে তুলতে নানা হিসাবনিকাশও করা হচ্ছে।

জানা গেছে, চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিনও সবার সঙ্গে যোগাযোগ ও দলীয় নেতাকর্মীর খোঁজখবর নিতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন। আত্মগোপনে যাওয়ার পর নতুন একটি নাম্বার দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ চালাচ্ছেন তিনি।

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ফয়সাল বিপ্লবের মোবাইল ফোনে কল এসেছে ১৩৮টি। আর বিপ্লব কল করেছেন ২৩৭টি জায়গায়। তাঁর স্ত্রী আফরিনের মোবাইল ফোনে কল এসেছে ১২২টি। তিনি কল করেছেন ৬৭টি।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট মধ্যরাতে ফয়সাল বিপ্লবকে প্রধান আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা করা হয়। তবে এ মামলায় মহিউদ্দিন, তাঁর ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার মো. আনিছুজ্জামান আনিছ এবং বিপ্লবের স্ত্রী আফরিনকে আসামি করা হয়নি।

তবে গত ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের ওপরে সশস্ত্র হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তাদের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে বলে গোয়েন্দা সদস্যদের হাতে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের পরিবারের সব সদস্যের গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। প্রয়োজন হলে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, বিপ্লবসহ ২০৮ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত