মারা গেলে স্বজনরা চিনতে পারবে, এমন ব্রেসলেট পরছে গাজাবাসীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৩ |  আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১২

ইসরায়েলের অবিরাম বিমান হামলায় গাজাজুড়ে কেবল লাশ আর লাশ। মৃত স্বজনদের দাফনও করতে পারছেন না গাজাবাসীরা। প্রতিদিনই একসঙ্গে অনেক লাশ গণকবর দিচ্ছেন তারা। নামের বদলে লাশের সংখ্যা লিখে গণকবর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধিবাসীরা।

এমন পরিস্থিতিতেই এখন গাজার অনেক মানুষই পরিবার-পরিজনদের সকলকে নিয়ে হাতে আলাদা চিহ্ন দেওয়া বা নাম লেখা ব্রেসলেট পরছেন, যাতে ইসরায়েলি হামলায় মারা গেলে অন্তত মরদেহ শনাক্ত করা যায়। গণকবর নয়, নাম-পরিচয়সহ আলাদা কবর ভাগ্যে জোটার আশায় তারা।

পরিবারের সবাই যাতে একসঙ্গে মারা না যায়, সেজন্য গোটা পরিবারকে ভাগ করে আলাদা আলাদা জায়গায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গাজার এক বাসিন্দা আলি এল-দাবা। তিনি বলেন, তার ৪২ বছর বয়সী স্ত্রী লীনাসহ দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে গাজার উত্তরাঞ্চলে রেখেছেন। আর অন্য তিন সন্তান তিনি গাজার দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে চলে গেছেন।  ভারি বোমাবর্ষণে মারা যাওয়ার ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করেছেন তারা।

গাজার এই বাসিন্দা বলেন, তিনি সবচেয়ে খারাপ পরিণতির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের জন্য তিনি নীল রঙের স্ট্রিং ব্রেসলেট কিনেছেন এবং দুই হাতের কব্জিতে তা বেঁধে দিয়েছেন। এল-দাবা বলেন, “যদি কিছু হয় তাহলে আমি এভাবে তাদেরকে চিনতে পারব।”

আলি এল-দাবার মতো ফিলিস্তিনের অন্য পরিবারগুলোও তাদের স্বজন ও সন্তানদের জন্য ব্রেসলেট কিনছে কিংবা তাদের হাত, পায়ে নাম লিখে রাখছে।

স্থানীয় মুসলিম ধর্মগুরুরা ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের গণকবর দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। কবরে লাশ নামানোর আগে চিকিৎসাকর্মীরা লাশের ছবি ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন এবং লাশের হিসেবে রাখার জন্য সংখ্যা লিখে রাখেন।

ইসরায়েল বিমান হামলা চালানোর আগে গাজার উত্তরের বাসিন্দাদের দক্ষিণের দিকে চলে যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে। তবে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গোটা গাজাজুড়েই বিমান হামলা চলছে। নিরাপদ জায়গা আদতে কোথাও নেই।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, “ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) গাজার উত্তরের বাসিন্দাদের দক্ষিণের দিকে চলে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছে। তাছাড়া, গাজায় হামাসের নিশানার আশপাশ থেকেও অধিবাসীদের সরে যেতে বলা হয়েছে।

“কিন্তু হামাসের সদস্যরা মূলত গাজাজুড়েই সাধারণ জনগণের মাঝে ঢুকে পড়েছে। ফলে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের সংখ্যা সীমিত রাখতে পূর্বসতর্কতামুলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যেখানেই হামাসের নিশানা শনাক্ত হবে, আইডিএফ হামাসকে নিঃশেষ করে দিতে সেখানেই হামলা চালাবে।”

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ঢুকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলার পর এর জবাবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় বিমান হামলা শুরু করে।

হামাস-ইসরায়েলের চলমান এ লড়াই ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এক অধ্যায় রচনা করেছে। ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭০৪ জনই শিশু।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত