মাদারীপুরে এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় দুগ্ধপোষ্য নারীকে আটকে রাখার অভিযোগ

  এসআর শফিক স্বপন,মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২৪, ১৯:৫৫ |  আপডেট  : ৩ জুলাই ২০২৪, ১৭:৪০

ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মাদারীপুরের কালকিনিতে দুগ্ধপোষ্য এক নারীকে ৮ ঘন্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে গণউন্নয়ন প্রচেষ্টা নামে এক এনজিও বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯এ ফোন দিয়ে থানা পুলিশের সহযোগীতায় ওই গৃহবধুকে উদ্ধার করেন। এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হলে ওই এনজিওর বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং অভিযুক্তদের বিচার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। রোববার দিবাগত রাত ১১টার দিকে কালকিনি উপজেলার গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার অফিস কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও ভূক্তভোগী পরিবার। জানাগেছে,ওই নারী তিনটি শিশু সন্তান রয়েছে। দুগ্ধপোষ্যছোট বাচ্চার বয়স ৯ মাস।

পুলিশ ও ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের বাঘরিয়া গ্রামের অসহায় ওই গৃহবধু গনউন্নয়ন প্রচেষ্টা নামে একটি এনজিওর কালকিনি শাখা থেকে সম্প্রতি ৮০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। অসহায় ওই গৃহবধু ৩২ হাজার টাকার ঋন পরিশোধ করেন। পরে ওই অসহায় গৃহবধুর স্বামী বিদেশ গিয়ে নিখোঁজ থাকেন। ফলে ওই ঋনের বাকী টাকা পরিশোধ করতে না পারায় রোববার দুপুর তিনটায় গনউন্নয়ন প্রচেষ্টার কালকিনি শাখার ম্যানেজার মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে অফিস কর্মী সুবেন্দু বৈদ্য ও রুপালী বৈরাগী ওই গৃহবধুকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে তাদের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ সজিব স্থানীয় লোকজন নিয়ে ৯৯৯এ ফোন দিয়ে থানা পুলিশের সহযোগীতায় রাত ১১ টার দিকে ওই এনজিও কার্যালয় থেকে অসহায় নারীকে উদ্ধার করেন। এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হলে ওই এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং অভিযুক্তদের বিচার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

অসহায় নারী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী নিখোঁজ থাকায় ঋনের কিস্তি পরিশোধ করতে পারিনাই। তাই ম্যানেজার মো. জসিম উদ্দিন, অফিস কর্মী সুবেন্দু বৈদ্য ও রুপালী বৈরাগী আমাকে আমার স্বামী বাড়ি থেকে নিয়ে তাদের অফিসে আটকে রাখেন। আমি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোন রকম সংসার চালাই। আমি কি করে এ ঋনের টাকা পরিশোধ করবো বলতে পারিনা। 

ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ সজিব বলেন, আমার এলাকার অসহায় গৃহবধুকে আটকে রাখার অভিযোগ পেয়ে ৯৯৯এ ফোন দিয়ে স্থানীয় লোকজন নিয়ে থানা পুলিশের সহযোগীতায় তাকে উদ্ধার করি। আমার ছোট বাচ্চার বয়স মাত্র ৯ মাস। আমাকে যখন নিয়ে আসা হয় তখন আমার বাচ্চাটা অনেক কান্না করেছে দুধের জন্য। তবুও আমাকে ছাড়েনি। 

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, দুগ্ধপোষ্য নারীকে বাচ্চা থেকে আলাদা করে রাখা অমানবিক। আইনগতভাবে এটা করতে পারে না। এনজিওটির বিরুদ্ধে তদন্ত করে রাষ্ট্রের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।স্থানীয় রফিক ও রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গনউন্নয়ন প্রচেষ্টার এমন কাজ মেনে নেয়া যায় না। আমরা এর বিচার চাই। তবে এর পুর্বেও তারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার ম্যানেজার মো.জসিম উদ্দিন আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিস্তির টাকা পওনা থাকায় ওই গৃহবধুকে অফিসে আনা হয়েছিলো।  এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ বলেন, ঋনের জন্য এক গৃহবধুকে আটকে রাখার বিষয়টি জেনেছি। এবং পরে থানা পুলিশ ওই গুহবধুকে উদ্ধার করেছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত