কেড়কেড়া 

মণিপুরিদের আকাশ প্রদীপ

  সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ১০:২২ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:১৭

কুঙ্গ থাঙ
-----------

 
কেড়কেড়া৷ মণিপুরিদের আকাশ প্রদীপ৷ কার্তিক মাস জুড়ে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ বৈষ্ণবরা সন্ধ্যা হলে বাঁশের মাথায় বসানো লন্ঠন প্রজ্বলন করে বিষ্ণুর আশির্বাদ কামনা করেন৷ উচ্চারণ করা হয় এই মন্ত্র- 'আকাশে সলক্ষ্মীক বিষ্ণোস্তোষার্থং দীয়মানে প্রদীপঃ শাকব তৎ।' অর্থাৎ, আকাশে লক্ষ্মীর সঙ্গে অবস্থান করছেন যে বিষ্ণু, তাঁর উদ্দেশে দেওয়া হল এই প্রদীপ। 
 
যারা বৈষ্ণব নন, লৌকিক আপোকপা ধর্মানুসারী, তারা বলেন এই প্রদীপটি লক্ষী-নারায়ণের উদ্দেশে নিবেদিত নয় বরং আপোকপা বা পূর্বপুরুষদের স্মরণে প্রজ্জ্বলন করা হয়, যারা পরলোকে আছেন তারা যেন সেই আলোর রেখা ধরে নিকটজনদের আশীর্বাদ করতে পারেন৷ কৃত্যানুষ্ঠানটির নাম 'মেরা ৱাউংবা', মেরা হচ্ছে মণিপুরি বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাস৷
 
যুক্তিবাদীরা বলেন, আকাশে দীপ জ্বালানো হেমন্তকাল বরনের অংশ৷ শীতের আগমনের প্রস্তুতি হিসাবে আগুন বা তাপকে সংরক্ষণ করে রাখার একটা প্রতীকি উৎযাপন যা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে৷

মণিপুরি পুরাণগুলোতে অবশ্য এই আকাশ প্রদীপের ভিন্ন গল্প আছে৷ সুদুর অতীতের কোন এক সময়ে তিনজন ভাই বসতি গড়ার জন্য পাহাড়ে উঠে ৷ ছোট ভাইটি কিছুদুর এগিয়ে আর উঠতে পারে না, সেখানেই থেকে যায়৷ বড় ভাইয়েরা পাহাড়ে উঠে বসতি গড়ে তোলে৷ যাবার আগে তারা ছোটভাইকে বলে যায়, বছরের মাঝামাঝি এই সময়টাতে সে যেন উচুঁ বাঁশের মাথায় লন্ঠন জ্বালিয়ে রাখে, যাতে ছোট ভাই ঠিক আছে কিনা তারা জানতে পারে৷ তারপর থেকে এটা মণিপুরের ঐতিহ্য হয়ে যায়৷ এই কাহিনীটি মণিপুর উপত্যকার পাহাড় ও সমতলে বাস করা ৩০টির বেশি ছোট ছোট জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের কথা বলে৷ মণিপুর রাজ্যে এই উৎসবটি উৎযাপিত হয় তাদের মধ্যকার বন্ধন যে দৃঢ় সেটা দেখাতে৷
যে যাই বলুক, কার্তিক মাসে আকাশ প্রদীপ দেখলে লতা মুঙ্গেসকরের এই গানটির কথাই মনে পড়ে—
'আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে,
আমার নয়ন দু’টি শুধুই তোমারে চাহে
ব্যথার বাদলে যায় ছেয়ে।।'…

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত