ড. কামাল উদ্দিন
ভোট দানে বাধা দেওয়া ও বাধ্য করা উভয়ই মানবাধিকার লঙ্ঘন
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:১১ | আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০
কাউকে ভোট দানে বাধা দেওয়া এবং কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করা উভয়ই মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ভোট দেওয়া এবং ভোটে অংশগ্রহণ করা একটি অধিকার। তেমনি ভোট না দেওয়া এবং ভোটে অংশগ্রহণ না করাও অধিকার।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ক্ষেত্রে ভোট বর্জনে হস্তক্ষেপ কোনও রাজনীতি দল করতে পারে কি না বা করলে এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনও কোনও দেশে বাধ্যতামূলকভাবে ভোট দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সে ধরনের কোনও নিয়ম নেই। সে কারণে আমি বলবো, ভোট যদি কেউ না দিতে চায়, তাহলে সেটা তার ইচ্ছা। কেউ যদি ভোট দিতে চায়, তাকে বাধা প্রদান করা অনুচিত। বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই; এটা আইনের বরখেলাপ, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। আর কেউ যদি ভোট দিতে না চায়, তাকে বাধ্য করা হয়, সেটাও আচরণবিধি লঙ্ঘন। কেউ যদি ভোট দিতে না চায়, তাকে যদি জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়, সেটাও মানবাধিকার লঙ্ঘন।
সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের কারণ উল্লেখ করে ড. কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা জানি নির্বাচন একটা অধিকার। সাংবিধানিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ প্রত্যেকের একটি অধিকার। নির্বাচন করা এবং নির্বাচিত হওয়া দেশের নাগরিকের একটি অধিকার। সেই অধিকারটি যাতে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় এবং দেশে জাতীয় একটি সুন্দর নির্বাচন সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে আলোচনার জন্য আমরা এসেছিলাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের সুন্দর মতবিনিময় হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন-পূর্বকালীন আচরণ ও কার্যক্রম, নির্বাচন সময়কার আচরণ এবং নির্বাচন-পরবর্তী কালের আচরণ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। অনেক সময় দেখেছি নির্বাচন আচরণবিধির ভঙ্গ করে অনেক প্রার্থী ও কর্মীরা বিভিন্ন রকম উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যেটা মানুষের আস্থা অর্জন ব্যাহত হয়। এ ধরনের বিষয়টি যাতে না হয়, সেটা আমরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশেষ করে যারা সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য অথবা পঙ্গু বা অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তাদের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেগুলো যাতে না হয় এবং প্রত্যেক প্রার্থী ও ভোটাররা যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেছি। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে, সে বিষয়টি আমরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি।
২০০১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে চেয়ারম্যান বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় নির্বাচন-পরবর্তী সময় অনেক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল। বিশেষ করে ২০০১ সালে নির্বাচনের পর আমরা যে সহিংসতা দেখেছি, এ কারণে আমরা সব সময় উদ্বিগ্ন থাকি। ওই সময় অনেকে মৃত্যুবরণ করেছিল। অনেক নারীর সম্ভ্রম হরণ করা হয়েছিল। অনেকে কষ্টকর অবস্থায় পড়েছিল। এ ধরনের অবস্থা যাতে কখনোই না হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথাযথ কৌশলে নির্ধারণ করে সম্পাদনের জন্য বলেছি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ভোটাধিকার বিষয় একটা নির্দেশনা বের করেছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা অংশীজন অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন সাধারণ ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন যারা অংশীজন, তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের ভূমিকা যথাসাধ্যভাবে পালন করেন। এ বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু গাইডলাইন দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা চাই দেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে জনসংযোগ করে যাচ্ছি এবং করে যাব। এবং আমি বিশ্বাস করি সেটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।
বিএনপিসহ ১৭টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না, তাহলে এটি কি নিরপেক্ষ থাকলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে নির্বাচন করতে হয়। নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবেন বা না করবেন, প্রত্যেকেরই অধিকার রয়েছে নির্বাচন করা ও নির্বাচিত হওয়া। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি নির্বাচন না করতে চান, তাহলে তিনি এ অধিকারটি রাখলেন না। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার ব্যাপার বোধহয় কোনও সংঘাত সৃষ্টি করে না। কারণ কারও ইচ্ছা হলো তিনি নির্বাচন করলেন না, তিনি না-ই করতে পারেন। তবে আহ্বান জানানো একান্তই উচিত। আহ্বান জানানো হয়েছে বলেই আমরা জানি। আর যদি কেউ না-ই আসে, তাহলে কী আরা করা।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা দলগুলোকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এবং সরকার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল উদ্দিন বলেন, এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনও দায়িত্ব ছিল না বলে আমি মনে করি। কারণ কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আর সরকারের ছিল কি না, এটা আপনারা সবাই জানেন। সরকার চেষ্টা করেছে কি না, সেটাও আপনারা জানেন।
তিনি বলেন, যদি চেষ্টা করা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই সাধুবাদ দিতে হবে। আর কেউ যদি না এসে থাকে, এটা তার নিজস্ব অধিকার। তিনি ইচ্ছা করলে না-ও আসতে পারেন।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত