ভাইকে ফাঁসাতে চার মাসের সন্তানকে হত্যা!
প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২১, ১৯:১৭ | আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৫৫
বাগেরহাটের শরণখোলায় ভাইকে ফাঁসাতে চার মাসের কন্যা সন্তান নুপুরকে পুকুরে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাবা মজিদ মোল্লার (৩৫) বিরুদ্ধে। রবিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফাল বাড়ি গ্রামে নৃশংস এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। পুলিশ অভিযুক্ত মজিদকে আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বড় ভাইকে ফাঁসাতে তিনি এই ঘটনা ঘটানোর কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটির মা মারুফা বেগম বাদী হয়ে সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মৃত লতিফ মোল্লার ছেলে মজিদ মোল্লা দিনমজুরির কাজ করেন। নিজের কোনও জমি না থাকায় স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে একই গ্রামের নূর জাহান বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সংসারে অভাবের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। পাশাপাশি ১৫ কাঠা শরিকি সম্পত্তি নিয়ে বড় ভাই রশিদ মোল্লার সঙ্গেও মজিদের বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের সূত্র ধরে নিজের অবুঝ সন্তানকে বড় ভাইয়ের পুকুরে ফেলে দিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন মজিদ।
মামলার বাদী মারুফা বেগম বলেন, গত ৩০ মার্চ স্বামী মজিদ মোল্লা এবং ভাসুর রশিদ মোল্লার মধ্যে জমির বিরোধ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর পর থেকে সে (মজিদ) আনমোনা হয়ে চলাফেরা করতে থাকেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মাটির কাজ শেষে বাড়িতে এসে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছেলে নয়নকে (৯) সঙ্গে দিয়ে আমাকে স্থানীয় তাফালবাড়ি বাজারে ওষুধ কিনতে পাঠায়। এসময় মেজো মেয়ে নবীছা (৬) ও চার মাসের নুপুরকে স্বামীর কাছে রেখে যাই। সেই ফাঁকে মেজো মেয়েকে এক প্রতিবেশীর বাসায় রেখে সে (মজিদ) নুপুরকে নিয়ে ভাসুর রশিদ মোল্লার পুকুরে ফেলে দিয়ে আবার বাসায় চলে এসে চুপচাপ থাকে। তিনি আরও বলেন, ওষুধ নিয়ে ঘরে ফিরে নুপুরকে না পেয়ে জানতে চাইলে স্বামী অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। একপর্যায় বলেন, নুপুরকে নিয়ে বড়ভাই রশিদের বাড়িতে গেলে অন্ধকারে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মেয়েটি পুকুরে পড়ে গেছে। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গিয়ে সেই পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে শরণখোলা হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মজিদের বড় ভাই আ. রশিদ মোল্লা বলেন, আমাকে ফাঁসাতেই নিজের মেয়েকে আমার পুকুরে ফেলে রেখে যায়। কিন্তু পুলিশ তার কথা শুনে আসল ঘটনা বুঝতে পারে।
প্রতিবেশী আনোয়ার হাওলাদার বলেন, বড় ভাইয়ের সঙ্গে মজিদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে শুনেছি। সেকারণে ভাইকে ফাঁসাতে এই ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। মজিদের আগে থেকেই স্বভাব-চরিত্র খারাপ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বলেন, মজিদকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে নুপুরকে পুকুরে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় স্ত্রী মারুফা বেগম বাদী হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহত শিশুটিকে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত