গবেষণায় প্রাপ্ত ফল
ব্রয়লার মুরগির মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ নয়
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৫ | আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬
ব্রয়লার মুরগির মাংসে সহনশীল মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক এবং ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশ থাকে। ফলে এটি একটি নিরাপদ খাদ্য।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে পিআইডির কনফারেন্স রুমে ব্রয়লার মুরগির মাংসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল (ভারী ধাতু) ও অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে কি না, তা নিয়ে গবেষণায় প্রাপ্ত ফল প্রকাশ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গবেষণার ফল তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশীদ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম, বিআরসির সাবেক সদস্য পরিচালক ড. মনিরুল ইসলাম এবং গবেষণা টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কি না, এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক প্রচারণায় দেখা যায় যে, ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ফলে সাধারণ জনগণের মাঝে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তারা ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়। এতে ব্রয়লার শিল্পের ওপর একটি বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি এর নজির আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ২০২০ সালে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ ব্রয়লার মাংস খাওয়া অনেক কমে যায়।
তিনি বলেন, দেশে ব্রয়লার মুরগি খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। চাহিদা বাড়াতে পারলে দেশে যে পরিমাণ খামার ও অবকাঠামো রয়েছে। এর পুরোপুরি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। সেজন্য মানুষের কাছে মুরগির মাংস জনপ্রিয় করতে হবে। এটি করতে পারলে একদিকে আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠন সহজতর হবে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির বাজার দ্রুত বিকশিত হবে, মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া সুস্থ ও মেধাবী জাতি গঠনে, আমিষের চাহিদা পূরণে ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়ার বিষয়ে প্রচারণা ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
গবেষণার ফল তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে ও কম্পোজিটে মূলত দুটি অ্যান্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসিাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং তিনটি হেভি মেটালের (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে, যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে। খামার এবং বাজারের ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক ও হেভি মেটালের পরিমাণ কম রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, পোল্ট্রি খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় গ্রামে নিজস্ব আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন করা হতো। এখন এটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের আমিষের একটা বড় চাহিদা মেটায় এই খাত। ফলে নিজ উদ্যোগে অনেকেই এই খাতে এসে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। তবে কিছু ভুল-ভ্রান্তিমূলক তথ্যের কারণে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এজন্য আমরা একটি গবেষণা পরিচালনা করেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পোল্ট্রি খাত বড় ভূমিকা পালন করছে। তাই আমরা চেষ্টা করছি পোলট্রি খাতকে আরও আধুনিক করতে এবং এই খাতের বিকাশকে সরকারি পৃষ্টপোষকতা দিতে। এই লক্ষ্যে পোল্ট্রি খাদ্য আমদানিতে শুল্কে রেয়াত দিতে এনবিআরকে অনুরোধ করেছি। পোল্ট্রি খাতকে সামনে নিয়ে একটি কল্যাণকর অধ্যায় রচনার জন্য কাজ করছি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত