বেকার হচ্ছে শ্রমিক, হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন শিলপাটা
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:১৭ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৪০
সময়ের বিবর্তনে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ব্লান্ডারের প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী শিলপাটা। সেই সাথে বেকার হচ্ছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরা। আধুনিকতার ছোয়ায় খেটে খাওয়া শিলপাটার শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে পেশা বদলাতে বাদ্ধ হচ্ছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখন আর বিয়ে বাড়িতে আগের মতো হলুদ-মেহেদি বাটা হয় না। বর্তমানে বাজারে প্যাকেটে রেডিমেট হলুদ ও মেহেদি বাটা পাওয়া যাচ্ছে। শুধু শহরে নয়, গ্রামগঞ্জেও সব ধরনের মসলাজাতীয় প্যাকেট পাওয়া যায়। বিজ্ঞানের উৎকর্ষ আর আধুনিক প্রযুক্তির নানা বিকল্প উদ্ভাবনের ফলে এখন শিলপাটায় মসলা বাটায় উৎসাহী নয় এ প্রজন্মের নারীরা। তাই কালের প্রবাহে বাঙালির সমাজব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিলপাটার ব্যবহার। একটা সময় ছিল যখন প্রতিটি ঘরের গৃহিণীদের শিলপাটায় মসলা বাটা ছিল নিত্যদিনের কাজ। রান্নার আগে গৃহিণীরা শিলপাটা নিয়ে মসলা বাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। বর্তমানে কালেভাদ্রে চোখে পড়ে না শিলপাটা। রংপুরের কাউনিয়ায় প্রতিনিয়তই দেখা মিলত শিলপাটা ধারকাটা কারিগরদের। হাতুড়ি, ছেনি নিয়ে কারিগররা বিভিন্ন বাড়ির সামনে গিয়ে হাঁকডাক দিতেন, শিলপাটা ধার করবেন শিল পাটা......। সেই হাকডাক এখন আর শোনা যায় না। দিন দিন কমছে এই শিলপাটার কদর। আগের তুলনায় প্রতিনিয়তই কমছে শিলপাটার ব্যবহার। ঈদুল আজহার পূর্ব ছাড়া এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। বর্তমানে শিলপাটা ধারকাটার কারিগরদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রংপুর লালবাগ কেডিসি রোডের শিলপাটা ধারকাটা কারিগর মমিনুলের সাথে কাউনিয়ার হরিশ^র গ্রামে শিলপাটা ধার করার সময় কথা হলে তিনি জানান, আগে প্রতিটি গ্রামেই শিল পাটা খোদাই কাজের কদর ছিল, এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি বিশেষ করে বøান্ডারের প্রভাবে শিলপাটা খোদাইয়ের চাহিদা অনেক কমে গেছে। সারাগ্রাম ঘুরে ২/৪টা শিলপাটা ধার করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এই আয়ে সংসার চলে না, তাই অনেকেই জীবিকার তাগিদে এ পেশা ছেড়ে জোগালি, ইট ভাঙ্গার কাজ করছে। কেউ কেউ বাপ-দাদার এ পেশায় টিকে থাকলেও মানবেতর জীবন করছে। যারা আছেন তারা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনোরকমে টিকে রয়েছেন। মাছে ভাতে বাঙ্গালী। ৩ বেলা খাবারেই ভাতের সঙ্গে খেতে হয় বিভিন্ন প্রকার তরকারি। আর এসব তরকারী রান্না করতে প্রয়োজন হয় মসলা। এই মসলা পিশানোর জন্য প্রয়োজন শিল পাটা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাইন্ডার মেশিন ও ব্যালেন্ডারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় বিলুপ্তর পথে শিল পাটা। হরিশ^র গ্রামের নমিচা বেগম বলেন, আগে গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে শিলপাটা ছিল রান্নার মসলা বাটার জন্য, ডিজিটাল যুগে এখন মেশিনেই তৈরি হয় হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, গরম মসলা। শিলপাটার ব্যবহার এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এলাকার বাবুচি বাবলু জানান, এই অঞ্চলে শিলপাটা এখন বিলুপ্তির পথে। সবাই এখন প্যাকেট মসলা কিনে ও ব্যালেন্ডার করে খায়। রান্নায় রসদ জোগানো বিভিন্ন মসলা মিহি বা গুঁড়া করার জন্য এক সময় শিলপাটার বিকল্প বলতে কিছু ছিল না। তবে অনেকেই বলছেন শিলপাটায় বাটা মসলার তরকারীর স্বাদ আলাদা হয়। তাই অনেকে শিলপাটা বাড়িতে রেখেছে। তবে এই শিল্পকে বাচিয়ে রাখতে সরকারের প্রনোদনা দেয়া প্রয়োজন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত