বৃদ্ধি - সানজিদা আলম অনামিকা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:০০ |  আপডেট  : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০২

তাহার আছে শূন্য, অপূর্ণতা

লোকে বলে যাহার নাই তাহার কিছুই নাই।

তবে, আমি যা দেখিতে পেলুম,  তাহার কিছুই একটা আছে।

তাহার আছে শক্ত শিকড়,

তাহার আছে মোটা ডাল;

দেখিতে পুরো দৈত্যের ন্যায়।

তবে, ঐ দাম্ভিকতাই তাহার আর এক সৌন্দর্য 

তাহার‌ আর এক  ক্ষমতা।

কিন্তু, তাহার এই রুপ কেহ দেখিতে পায় না।

সক্কলেরই নজর কাড়ে ঐ সজীবতায়।

তাহার একপাশ শুষ্কতা, এক পাশ তাহার রঙ্গিন ফুলে   সমাহার।

একপাশ সবুজ পাতায় আচ্ছন্নে ভরা

একপাশ তাহার নিঃস্ব।

একপাশ পাখিদের আনাগোনা, আর এক পাশ নিঃসঙ্গতা।

চাইলে তাহারা আসিতে পারে, খেলিতে পারে, থাকিতে পারে; 

বলিতে পারে তোমার নাই হলেও কি?

আমরা আছি, থাকিব।

এই বলিয়া কি তাহার নিঃসঙ্গতা দূর করিতে পারে না? তবে মিথ্যে নহে। সত্যি অর্থে করিতে হইবে।

উহারা তাহার দিকে একবার হইলেও নজর দিতে পারে না? 

সত্যি অর্থে কি তাহার পাশে থাকিতে পারে না?

যতটুকু উহাদের সামর্থ্য ততটুকুই করুক নে।

পাখিরা একবার কি উড়িয়া সেই শুকনা ডালে

বসিতে পারে না?

তাহার শূন্যতা কে অনুভব করিবে,

তাহার অসজীবতাকে অনুভব করিবে,

তাহার একাকীত্বকে বুঝিবে,

সবসময় কি ঐ সজীব ডালেই বসিতে হইবে?

রঙিন ফুলের সুবাস পাইতে হইবে?

সেখানটায় মাতিয়া তুলিলে হইবে?

একবার সেই ডালে বসুক,

কল্পনা করুক,

তাহার সহিত দুই টা কথা বলিবে।

এই আর কি? 

কিন্তু না।

উহারা ভুল করিয়াও তাহার সামনে যায় না।

আর যদি  যায়, ওখান হইতে পাশ কাটিতে বেশি সময় লাগিবে না।


তবে যে তাহারা ব্যস্ত, ব্যস্ত ঐ যে সেই সজীবতা, ঐ রঙ্গিনতা, শীতলা-বাতাসে ছোঁয়া ভাসিয়া-মাহিয়া দেয় তাহাদের মলিন দেহটা।

তবে, এই সজীবতা, এই রঙ্গিন, এই মাধুর্য রুপ ব্যতীত আরও এ‌ক রুপ, শুষ্কতা, শূন্যতা, নিঃসঙ্গতা, নিকৃষ্ট আছে তা  সক্কলে জানিয়াও না জানিবার ভান 

করিয়া চলে। তবে, ভানও বলিয়া ভুল হইবে।

তাহারা অস্বীকার করে।

এই জীবনে বাহারি রঙের ব্যতীতও ধূসর রঙ আছে,

এ তাহার অস্থি-মস্তিষ্কে থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ে তাহাদের কোনো ব্যারাম নাই। 

 সে চাইলে ঐ বাহার, ঐ মাধূর্য সজীবতা ফিরে আসিতে পারে যদি সে নিজেকে চিনিতে পারে।

 নিজের  শূন্যতাকে শূন্যতা না মনে করে।

যদি না সে অন্যের মাধূর্যতা দেখিয়া অনুশোচনা বোধ করে। নিজের উদ্যম, উদ্বোধনী শক্তিকে না চিনে, না কাজে লাগাইতে পারে তবে জীবন ভারী দূর্লভ, তাহার এইটাই দূর্বলতা।

যদি তাহার নিজের এই দূর্বলতা তাহাকে গ্রাস করে তবে এ জীবনে

 কিছুই করিতে পারিবে না।

 তাহার নাই নাই না ভাবিয়া তাহার কি থাকিতে পারে তা ভাবিবার প্রয়োজন।

সকলেরই অভাব থাকে। কাহারও জীবন পূর্ণতা আছে কি? এ তা কি কেহ বলিতে পারিবে? 


সে যদি তাহার শক্ত শিকড় দিয়ে অথবা তাহার মূল দিয়ে মাটির পানি এবং পুষ্টি শুষে নেয় একদিন তাহার কান্ডেও মুকূল ধরিবে, তাহার ডালে সবুজ পাতায় ভরা থাকিবে।

বাহারি রঙের ফুলের সৌরভে চারদিক মেতে উঠিবে।


বিশ্বাস করুন সেদিন রাত্রি হোক আর কিংবা দিবায়; ঝিঁঝিঁ ডাকিবে, পাখিরাও খেলিবে,

বাতাস বইবে।

তবে, তাহার রাখিতে হবে প্রবল বিশ্বাস।

না ধরিলে না-ই। কিন্তু দূর্বল হইলে চলিবে না।

 আর, একপাশ যাহার  সবুজের ভরা সে নাকি করে অহংকার।

 তাহার আছে বলিয়া অহংকার করিতে হইবে।

তাহার অন্যকে লাঞ্ছিত করিতে হইবে।

আরেক পাশের যাহার নাই জানে তবুও উহার হইতে সেই লইবে, চাইবে উহাকে বারংবার বিরক্ত করিয়া থাকিবে।


কিন্তু আরও এক পাশ আছে যেথায় নহে তেমন সবুজ, নহে খালি। 

তাহার অর্ধেক রইছে  সজীব, আর অর্ধেক তাহার শুষ্ক।

সে হয়তো ধীরে ধীরে তাহাদিগকে লাল- সবুজ করিতেছে।

 তাহার কান্ডকে মুকূলে ধরিয়া দিতেছে।

 সেও এক কাল অসবুজ ছিল,

 এখন তাহার ফুলে ফুলে ভরিতেছে।

  পাখিরা আসিতেছে, ফল ধরিতেছে, লোকে আসিতেছে সবই ধীরে ধীরে হইতেছে।

 তাহার অর্ধেক অপূর্ণতাকে কেহ তিরস্কার করে না, কেহ তাহাকে লাঞ্ছনা দেয় না। 

এই ভাবেই তরু নিজেকে তুলিয়া ধরে সকলেরই সামনে। তাহার কোনো দুঃখ নাই যখন তাহার পাশে কেহ ছিল না, আবার তাহার এই সজীবতা নিয়েও অহং নাই। বরং যাহার নাই তাহাকে দেখায়া দিতেছে যে চাইলে তুমিও পারিবে আমারি মতন হইতে।  মানব জীবনের বিকাশ এমনেই করিয়াই আসে। 

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত