বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে চলছে মত - দ্বিমত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:১২ |  আপডেট  : ২ মে ২০২৪, ১৮:৩০

২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। কিন্তু গেল সপ্তাহে ছাত্রলীগের সদস্যরা বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম করার অভিযোগ এনে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তবে এই আন্দোলনের ফল শেষ পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে যায়নি। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৌঁছালে সেখান থেকে নির্দেশ আসে বুয়েটে সব ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রজ্ঞাপন স্থগিতের। এর ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা থাকছে না।  

আর এ সিদ্ধান্ত আসার পর নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রাজনৈতিক গতিশীলতা আনতে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ

সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাইছেন না বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসুক। বরং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ফেরার বিষয়টিকে তারা ‘অন্ধাকার দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়ে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, 'একটি প্রতিষ্ঠানের সবাই ছাত্র রাজনীতি করবে বিষয়টি এমন নয়। কারও ভালো লাগলে সে ছাত্র রাজনীতি করবে, আবার ভালো না লাগলে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হবে না, এটাই স্বাভাবিক। এটা তো যার যার অধিকার। আমরা শিক্ষার্থীদের এই অধিকার নিয়েই এতদিন কথা বললাম। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক অধিকারকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। একজন মানুষও যদি তার অধিকার বাস্তবায়নের সুযোগ চায় সেটি দিতে হবে। '

শিক্ষার্থীরা বলছেন, 'আমরা চাই এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে ভুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র‍্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়। যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদের তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না।' আদালতের সিদ্ধান্ত আসার পর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, রাজনীতির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসন— সবাই মিলে একটা রূপান্তর করতে হবে। কীভাবে সেটা করা যায়, তা আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে। বর্তমানে ইউকসুর (ছাত্র সংসদ) কার্যক্রম বন্ধ আছে। সব পক্ষের মতামত নিয়েই একটা কিছু করতে হবে। একা কিছু করলে, তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সেটা সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হতে হবে, অর্ডিন্যান্সে যুক্ত হতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের অনুমোদন নিতে হবে। তা না হলে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে ঢুকবে না। আর বিশ্ববিদ্যালয় তার নিয়মে চলে। কিন্তু আদালতের আদেশ শিরোধার্য।

এদিকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসার বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির। তিনি বলেন, 'বুয়েটে এখন যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে সেটির জন্য ছাত্রলীগ দায়ী। আমরা মনে করছি, ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই বুয়েটের বর্তমান আন্দোলন হচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না সে সিদ্ধান্ত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেবেন। আমরা দেখেছি, বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীকেও শিবির আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ বরাবরই এ ধরনের কাজ করে আসছে। ভিন্ন মত প্রকাশ করতে চাইলেই এ ধরনের ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে'।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাইম বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচিত ছাত্র সংসদকে টপকে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পক্ষেই হলের দখল নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্ভবপর হবে না। এমনকি ছাত্র সংসদের দ্বারা সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ করে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হবে।

এদিকে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা বলছেন, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, সেশনজট, র‍্যাগিং-বুলিং, দখল-বাণিজ্য, হত্যা-সন্ত্রাসের ছাত্র রাজনীতি নয়। এই ছাত্র রাজনীতি হবে আধুনিক, যুগোপযোগী, বৈচিত্র্যময়-সৃষ্টিশীল, জ্ঞান-যুক্তি-তথ্য-তত্ত্বনির্ভর। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ র‍্যাংকিংধারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি কীভাবে পরিচালনা হয় তা থেকে জ্ঞান নিয়ে, নিজেদের চর্চায় সেটি নিয়ে বুয়েট আমাদের ছাত্ররাজনীতিকে পথ নির্দেশ করবে।

ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের মতে ‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের নামে সেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বিশ্ব মানবতাবিরোধী মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ তাদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে খুঁটি গেড়ে বসেছে। বাঙালির মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্মরণ করতে বাধাদান করা হয়েছে। একইসঙ্গে একজন শিক্ষার্থীর সংবিধান সম্মত চলাফেরা, মতপ্রকাশ, সমাবেশ ও সংগঠন করার যে অধিকার তা চূড়ান্তভাবে খর্ব করা হয়েছে।'

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত