গল্প-১

বিদেশ থেকে আসছে খোকা অপেক্ষায় বাবা-মা 

  ইসমাইল হোসেন, জেলা প্রতিনিধি, মেহেরপুরঃ

প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:২৪ |  আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৫

অনেক দিন পর বিদেশ থেকে আসছে একমাত্র খোকা। মা-বাবা পথের দিকে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত তবুও আসলো না তাদের খোকা। বাবা-মা’র একমাত্র পুত্র সন্তান গত তিন বছর আগে বিদেশ গেছে। মহামারী করোনা ভাইরাস সহ বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে বাঁচতে প্রতিদিনিই বাবা-মা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত সন্তানের জন্য দোয়া করে, যেন তাদের খোকাকে সৃষ্টিকর্তা হেফাজতে রাখে। 

মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে যখন সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন, বাবা-মা শুনতে থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে করোনা ভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তত যেন চিন্তাই সন্তানের জন্য শুকিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা’র শরীরটা কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। তবুও তাঁদের খোকাকে বুঝতে দেয়নি। সারা বিশ্বে মহামারী করোনা ভাইরাস যখন শিথিল অবস্থায়, আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসাতে একমাত্র পুত্র সন্তান যখন তার পিতা-মাতাকে জানাই সে দেশে আসবে, একথা শোনার সাথে সাথে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের শরীর যেন আবার প্রাণ পেতে থাকে। খোকা আসছে বিদেশ থেকে, আনন্দে বৃদ্ধ বাবা-মা পথের দিকে অপেক্ষায়। দেশে বিমান পৌঁছাল, খোকা আসছে খবরও পেল। বৃদ্ধ মা নিজে ঠিকমত সারাদিন না খেয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে খোকার পছন্দের সব আয়োজনের পাশাপাশি খাবার তৈরী করে বাবাকে বলল যাও রাস্তার দিকে, খোকাকে সাথে করে নিয়ে আস। মায়ের মন আর সঁইছে না, সন্তানকে এক নজর দেখার জন্য। কি খাওয়াবে! কি করবে! খোকার জন্য চিন্তাই সারাদিন নিজের খাওয়াটুকুও হয়নি। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে বৃদ্ধ বাবা রাস্তার দিকে চেয়ে রয়েছে, খোকা আসছে। 

একবার কিছুদুর যায়, আবার ফিরে আসে, এভাবে সন্ধ্যা হলো তবুও খোকা এল না। খোকার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে অন্ধকারে অসুস্থ্য শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরে এল বৃদ্ধ বাবা। বাড়িতে এসে শুনতে পেল তার খোকা ফোন করে বাড়িতে জানিয়েছে আজ আসতে পারবে না। আজ শশুর বাড়ীতে থাকবে কাল আসবে। একথা শুনার পর অসুস্থ্য বৃদ্ধ মা’র দুচোখ বেয়ে নোনা জ্বল গড়িয়ে পড়তে লাগল। খোকার মা’র দুচোখ বেয়ে জ্বল পড়তেই বাবা খোকাকে মুঠো ফোনে রাগের মাথায় অনেক বকা দিয়ে লাইনটি কেটে দেয়। খোকার মায়ের কান্না অনেকে দেখলোও বাবার কান্না কেউ দেখলো না। বাবা নিরবে একা একা ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে। তারাতো আর জানে না খোকা বড় হয়েছে। তাদের ছোট্র খোকাটি আর খোকা নেই, এখন বড় হয়েছে। সে নিজের পায়ে চলতে শিখেছে, নিজে বুঝতে শিখেছে। অবশেষে বৃদ্ধ বাবা-মা অসুস্থ্য শরীর নিয়ে সারাদিন অনাহারে থেকে বিছানায় গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। 

এদিকে তাঁদের খোকাটি শশুর বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মোজ-মাস্তিতে সময় পার করল। এখন খোকা কি করবে ? বিস্তারিত দ্বিতীয় গল্পে- আমাদের এ গল্পটি কাল্পনিক। যদি কারোর সাথে বাস্তবে মিলে যায় তার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত