বিতর্ক এড়াতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৯ নির্দেশনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:০৬ |  আপডেট  : ৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৪০

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সরকারি কর্মচারীদের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক থাকতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো কথা, স্লোগান, জয়ধ্বনি, কিংবা বাক্য বলা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকার নির্দেশনাও রয়েছে এর মধ্যে।

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলস উর রহমানের স্বাক্ষরে এসব নির্দেশনা দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর সব সচিবদেরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রবেশমুখের ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’ লেখা প্রদর্শনের ঘটনায় গত ২৭ অক্টোবর রেলওয়ের এক প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

ওই ঘটনায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যকে বদলির পাশাপাশি জিআরপি থানায় একটি মামলাও হয়েছে। ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটিও হয়েছে।

এর আগে ২৪ অক্টোবর বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে জরায়মুখ ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসানের উপস্থিতে সিভিল সার্জন জালাল উদ্দিন তার বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করেন।

তার ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিক্রিয়া দেখান স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।


‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করার পর ৪ নভেম্বর বাগেরহাটের সিভিল সার্জন জালাল উদ্দীন আহমেদকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সচিবদের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতাধীন সংযুক্ত দপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সচিবদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, “দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকারি কর্মচারীদের অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ের কিছু অফিসের কর্মকাণ্ডের সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা অনভিপ্রেত।”

জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলস উর রহমান চিঠিতে বলেছেন, “বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আপনার মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতাধীন সংযুক্ত দপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের অফিসসমূহের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়ে অথবা আপনার বিবেচনায় আরও কিছু বিষয় সংযোজিত করে একটি নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে মর্মে আমি মনে করি।”

৯ নির্দেশনা

>> নিজ অধিক্ষেত্রের যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগদানের চূড়ান্ত আমন্ত্রণ গ্রহণের আগে আয়োজক প্রতিষ্ঠান/সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে নিবিড়ভাবে তথ্য সংগ্রহপূর্বক আমন্ত্রণ চূড়ান্ত করা;

>> বিতর্ক এড়ানোর লক্ষ্যে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা; কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকায় থাকলে উক্ত অনুষ্ঠান পরিহার করা।

>> আয়োজিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র/ব্যানার/লিফলেট/পতাকা/অন্যান্য যেকোনো ছাপানো কাগজের বর্ণনা, লোগো বা স্লোগান ইত্যাদি বিষয়ে কোনো আপত্তিকর/ বিতর্ক সৃষ্টিকারী কোনো উপাদান রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করা।

>> অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা গ্রহণ।

>> নিজস্ব অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র/ ব্যানার/ চিঠি/ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন/ সাজ-সজ্জা/ ফ্রেন্ট/ সার্টিফিকেট/ ট্রফিমেডেল/ স্যুভেনিয়র ইত্যাদি ভালোভাবে পরীক্ষা করা; এ সকল ডকুমেন্ট অথবা স্মারকে যাতে কোনো প্রকার আপত্তিকর বা বিতর্ক সৃষ্টিকারী কোনো উপাদান বা বক্তব্য না থাকে, তা নিশ্চিত করা।

>> সরকার কর্তৃক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে যে সকল দিবস বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, সে সকল দিবস যাতে পালিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।

>> সরকার কর্তৃক বাতিল ঘোষিত দিবসসমূহের পূর্ববর্তী বছরগুলোর সকল স্মারক/ ক্রেস্ট/ ছবি/ স্যুভেনিয়র ইত্যাদি সকল অফিস থেকে অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

>> আনুষ্ঠানিক (সাধারণ) প্রতিটি সভা/অনুষ্ঠানের জন্য লিখিত বক্তব্য প্রস্তুতপূর্বক পাঠ করা। লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো কথা/ স্লোগান/ জয়ধ্বনি/ বাক্য বলা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা।

>> যেকোনো প্রকারের গুজব থেকে নিজে এবং নিজ অধিক্ষেত্রের সকল সহকর্মীকে দূরে রাখা।

সংশ্লিষ্ট সচিবদের এ সংক্রান্ত একটি উপানুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত