বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:০২ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৬
আজ আমাদের মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী। ১৯৭১ সালের এ দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পনে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে পলাশীর আমবাগানে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের পড়ন্ত বিকালে রমনার সবুজ চত্বরে তা আবার তার হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখিয়েছিল। বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছিল ১শ নব্বই বছরের ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন এবং ২৪ বছরের পশ্চিম পাকিস্তানি শোষণ নির্যাতনের কবল থেকে। তবে, সে শৃঙ্খল মুক্তির জন্য আমাদের গুণতে হয়েছে চড়া দাম। ত্রিশ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, দু লাখ মা- বোনকে তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ উৎসর্গ করতে হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বাণী দিয়েছেন। দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। দিনটি সরকারি ছুটির দিন।
আজকের এই মহান দিনে সশ্রদ্ধ চিত্তে আমরা স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দকে, যারা এদেশের মানুষকে শোষণ-ব নার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে অনুপ্রাণিত করেছেন, স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমরা শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতির প্রতি, অভিবাদন জানাই দু’লাখ মা-বোনকে, যারা এই স্বাধীনতার জন্য তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। আমরা অভিবাদন জানাই সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যারা নয়টি মাস নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য অকুতোভয়ে লড়াই করেছেন হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে।
আজ বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে দাঁড়িয়ে একটি প্রশ্ন সবাইকে তাড়িত করে, যে আকাক্সক্ষা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তার কতটা পূরণ হয়েছে। অস্বীকার করা যাবে না, যে স্বপ্ন বুকে লালন করে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, তার শতভাগ পূর্ণতা আসে নি। আমাদের বহু কাক্সিক্ষত সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাংলাদেশ আমরা পাইনি। আজও দেখা যায়, সমাজবিরোধীচক্র দোর্দন্ড প্রতাপে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলতে। আজ সর্বত্র ঘুষ দুর্নীতি অবিচারের ব্যাপক বিস্তার। সাধারণ মানুষ এসব দুষ্কৃতকারীর প্রচন্ড দাপটের কাছে অসহায়। সন্ত্রাসীদের উদ্বাহু নৃত্য সমাজজীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। রাজনৈতিক মতবিরোধ এমন পর্যায়ে গেছে যে, গোটা জাতি আজ বিভক্ত। এই বিভক্তি, এই অনৈক্য আমাদের জাতীয় অগ্রগতির পথে সৃষ্টি করছে অনাকাক্সিক্ষত বাধা।
পঞ্চাশ বছরে আমরা অর্জন করেছি ব্যাপক অর্থনৈতিক সাফল্য। এক সময় যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করেছিল, আজ তারা বাংলাদেশকে সমীহ করে। তারা অবাক বিস্ময়ে দেখছে অর্থনীতির ইমার্জিং টাইগার থেকে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে। তারা বিস্মিত কী করে বাংলাদেশ এই সাফল্য অর্জন করল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে মডেল। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প বিশ্বের বহু দেশের কাছে সমাদৃত। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন আমাদের অগ্রগতির অন্যতম মাইল ফলক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। এই অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হলে দরকার জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করা। রাজনৈতিক মতপার্থক্য যাতে আমাদের জাতীয় স্বার্থ তথা অগ্রগতির পথে প্রবিন্ধকতা সৃষ্টি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই। স্মরণ রাখতে হবে, ঐক্য আমাদের বলশালী করবে, অনৈক্য করবে দুর্বল, শক্তিহীন।
আজ আমরা বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। এক দিন এ জাতি পালন করবে বিজয়ের শততম বার্ষিকী। সেদিন আমরা অনেকেই এ পৃথিবীতে থাকব না। তবে, অনাগত সেই দিনটি যেন আরো উন্নত এক বাংলাদেশে পালিত হয়, তার পথ রচনা করে যেতে হবে আমাদেরকেই।
বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীতে গ্রামনগরবার্তার পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, পৃষ্ঠপোষক, শুভানুধ্যায়ী সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত