বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আলেম-ওলামাদেরও মুক্তি চাইলেন ফখরুল
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১৬:১২ | আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯
লকডাউনের সুযোগ নিয়ে ক্র্যাকডাউন করে নির্বিচারে আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ধর্মীয় নেতাদের গ্রেফতার ও হয়রানি দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ মেনে নেবেন না। অবিলম্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গ্রেপ্তারকৃত আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, লকডাউনকে ব্যবহার করে ক্র্যাকডাউনে এরইমধ্যে বিএনপির তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে ধর্মীয় নেতা আলেম ওলামাদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা ধর্মীয় মানুষ শ্রদ্ধার পাত্র তাদের গ্রেফতার করে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা সরকারের তৈরি করা। আমি এর আগেও বলেছি সরকার খুব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাগুলো যাতে ঘটে সে ব্যবস্থা নিয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন ২৬ মার্চে কয়েকটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ করেছিল। আমরা দেখেছি, বায়তুল মোকাররমে যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে অশান্তি করার জন্য পুলিশের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল। তারপরে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকেরা তাদের ওপর হামলা করেছিল। সে কারণে হাটহাজারিতে ওই ঘটনাগুলো ঘটেছে। সে ঘটনাগুলো কিন্তু তারা কখনোই বলছে না। তারা বার বার করে দোষ চাপাচ্ছে ধর্মীয় সংগঠনগুলো এবং বিএনপি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি এখনও বলছি ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছি সেটা মানুষ মেরে ফেলার জন্য। সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০বছরকে মানুষের রক্ত দিয়ে কলুষিত করা হয়েছে আমরা তার প্রতিবাদ করেছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ধর্মীয় নেতাদের এভাবে গ্রেফতার হয়রানি করা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। আমরা তাই আহ্বান জানাবো, অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার করা হোক, যারা আলেম ওলামা তাদের মুক্তি দেওয়া হোক এবং বিএনপির যেসব নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও সব মামলা তুলে নেওয়া হোক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দাবি করেছি ওলামাদের সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাদের মুক্তি দিতে হবে। আমরা বারবার বলেছি হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। যোগসূত্র একটাই তারা কোনো বিরোধীমতকে সহ্য করবে না। তারা বলছে হেফাজত তাণ্ডব করছে। মূলত তাণ্ডবগুলো করছে সরকার। এটা তাদের পরিকল্পিত।
বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন একটা দলে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হেয়ে গেছে বলেই তাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপরে ভর করে রাজনীতি করতে হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে। তাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে। তাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে। সেই ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের সাহেবদের আওয়ামী লীগকে আর গণতান্ত্রিক দল বলার কোনো অধিকার নেই। তারা যেটা বলছেন, সেটা ভূতের মুখে রাম রাম।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব প্রতিদিন একা একা কথা বলেন। তিনি বোঝাতে চান যে গণতন্ত্রের একমাত্র ধারক ও বাহক তারাই। ১৮ এপ্রিল বলেছেন, ‘আমাদের নিজেদের দলে গণতন্ত্র নেই, আমরা আবার কিসের গণতন্ত্র চাই’। বিষয় সেটা না বিষয়টা হলো আপনারা গণতন্ত্রকে কোন জায়গায় নিয়ে গেছেন। গত ১০ বছর অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছেন।
ওবায়দুল কাদেরকে তিনি বলেন, আপনারা ২০১৪ সালের নির্বাচন করেছেন সম্পূর্ণ একতরফাভাবে। কোনো বিরোধীদল বিএনপি-গণফোরামসহ কেউ সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার কারণে। আমরা ওই নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। কারণ বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে সেই নির্বাচন করা হয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ১৫৪ জনকে বিনাভোটে নির্বাচিত করে তারা সরকার গঠন করেছিল। একইভাবে ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ৩০০ আসনেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং আপনাদের আর নিজেদের গণতান্ত্রিক বলার কোনো অধিকার নেই।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত