বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ইউনূস ইস্যুতে আশ্রয় নিয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:০৭ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৫৭

বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুতে আশ্রয় নিয়েছে, এমন মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, এভাবে আশ্রয় নিয়ে যারা খুন, মানুষ পোড়ানো ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে, যাদের জন্মটাই খুন ও রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে, তাদের হাতে দেশ ও জাতির কখনো উন্নয়ন-অগ্রগতি হয় না।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বেদনাতুর ১৯৭৫ আগস্টের শহিদদের আলেখ্য’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।বইটি লিখেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ড. জেবউননেছা।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাকি বলেছেন, তাদের (বিএনপি) আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। আমি ড. ইউনূসের প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, নোবেল পুরস্কার পেলেই কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে? দেশের রাষ্ট্রপতি হলে কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে? হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাকেও কয়েক বছর জেলখানায় কাটাতে হয়েছে৷ এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনিও শাস্তি ভোগ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকেও কিছুদিনের জন্য জেলখানায় যেতে হয়েছে।  

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা এখন বড় বড় কথা বলে। রাত-বিরাতে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। কেউ তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার সমর্থন করেনি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আসছেন, আবার রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছুটে আসছেন আগামীকাল। এতেই প্রমাণিত হয়, বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে আছে।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশে নয়, বরং বাংলাদেশ, জাতি, রাষ্ট্রকে হত্যার উদ্দেশে ঘটানো হয়েছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড মানব ইতিহাসের জঘন্য হত্যাকাণ্ড। কারণ এই হত্যাকাণ্ডে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুকেও রেহাই দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করতেন, তাহলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পর আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নানা কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে দেশভাগের পর তিনি পূর্ববাংলাকে স্বাধীন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার এক বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালিদের মুক্তি নিহিত নেই। তিনি একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তর করলেন। মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে তিনি রাজনীতি করেছেন। তার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই কুশীলব খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমান। এই দায় তারা কখনো এড়াতে পারবে না। এই জাতির দুর্ভাগ্য, যাদের হাতে রক্ত, যারা খুনের ওপর দাঁড়িয়ে, রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে এবং সেই রাজনৈতিক দল নাকি আবার ভোটও পায়! 

ব্যাতিক্রমধর্মী ও গবেষণালব্ধ গ্রন্থ রচনা করার জন্য অধ্যাপক জেবউননেছাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের ওপর অনেক বই রচিত হয়েছে। কিন্তু অনেক বইয়ের মান সঠিক থাকে না। সেখানে জেবউনেছার বইটি ব্যতিক্রম। কারণ ১৫ আগস্টে নিহতদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে জেনে দীর্ঘদিন ধরে খোঁজ-খবর নিয়ে বইয়ের মধ্যে নিয়ে আসার কাজটি সম্ভবত আগে কেউ ভালোভাবে করেনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এমন একটি পরিশ্রমলব্ধ গ্রন্থ লেখার জন্য জেবউননেছাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি জাতির পক্ষ থেকে এটি করেছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। ছোট্ট রাসেলকেও সেদিন ঘাতকরা বাঁচতে দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মপ্রশ্ন আমাদের অর্জন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয়েছে, কিন্তু এর পেছনের কুশীলবদের বিচার করা হয়নি। কারা এর পেছনে ছিল, সেটা সবাইকে জানাতে হবে। এজন্য আমাদের আত্ম জিজ্ঞাসা, আত্মপ্রশ্ন করতে হবে।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সভাপতি ও ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান বলেন, ৭৫ এর নৃশংস হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছিল, তারা এর ইতিহাস অনেকভাবে চাপা দিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছিল, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম সেই ইতিহাস জানতে না পারে। যদি আমরা এই ইতিহাস ভুলে যাই, তাহলে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বই হারিয়ে যাবে।  

১৫ আগস্টে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বইয়ের লেখক ড. জেবউননেছা বলেন, আমি বইটি লেখার কাজ শুরু করেছিলাম ২০২০ সালের আগস্টে। ওই হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মৃতি স্বজনরা কীভাবে রক্ষা করছেন, সেসব গল্প আমি আমার এই বইয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই বই লিখতে গিয়ে বহুবার আমার আবেগকে সংবরণ করতে হয়েছে। এই বই থেকে আগামী প্রজন্ম ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস জানতে পারবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মেজো কন্যা হুরুন্নেছা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, শহীদ আব্দুল নঈম খানের বড় বোন সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা, শহীদ কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদের কন্যা আফরোজা জামিল, শহীদ সুলতানা কামালের ছোট ভাই গোলাম আহমেদ মৃধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের নাট্যবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা ম হামিদ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত