বাসের তীব্র সংকট, ঢাকার মোড়ে মোড়ে দীর্ঘ অপেক্ষা
প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২২, ১০:৪৪ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৫৫
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরপরই ঢাকার রাজপথে বাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সকাল থেকেই ঢাকায় বাসের দেখা মিলছে না আগের মতো। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়েও গণপরিবহনে উঠতে না পারায় সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি ও ক্ষোভ বাড়ছে।
শনিবার (৬ আগস্ট) মতিঝিল, বাড্ডা, লিংক রোড, মগবাজার ও শ্যামলীর মিরপুর রোড এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসব এলাকায় দেখা গেছে, বাসের জন্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। প্রতিটি মোড়ে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঝেমধ্যে দু-একটি বাস এলেও সেগুলোতে যাত্রীতে ঠাসা। দুএকজন নেমে গেলে সেই শূন্যস্থান পূরণে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এতে দুএকজনের বাসে ঠাঁই হলেও বাকিরা হতাশ হয়ে পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকে বাসে উঠতে পারবেন না এমন আশঙ্কা থেকে বিকল্প উপায়ে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।
বাসের সংকটের কারণে পোয়াবারো অবস্থা রিকশা চালকদের। সুযোগ বুঝে তারাও বাড়িয়েছেন দাম। সিএনজি অটোচালরাও বাড়িয়েছেন দাম। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সংখ্যা বাড়ায় ভোগান্তি বেড়েই চলছে।
বাড্ডা এলাকায় গাড়ির জন্য অনেক মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। নতুনবাজার মোড় পর্যন্ত মোড়ে মোড়ে যাত্রীরা দীর্ঘ সময় ধরে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এসব এলাকায় ১০ থেকে ২০ মিনিট পরপর একটি-দুটি করে বাস এলেও সেগুলোর অধিকাংশেরই দরজা বন্ধ। ফলে কাঙ্ক্ষিত বাস আসার পরও অনেকে বাসে উঠতে পারছেন না। সাপ্তাহিক ছুটির দিন সড়কে মানুষের সংখ্যা কম থাকলেও বাস সংকটের কারণে আজ প্রতিটি বাসে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পরও গণপরিবহন না পেয়ে অনেকে অটোরিকশা ও রিকশা খুঁজলেও সেখানে আরেক বিপত্তির মুখে পড়েছেন। সুযোগকে শতভাগ কাজে লাগাচ্ছেন এসব যানের চালকরা। স্বাভাবিক দামের চেয়ে বেশি ভাড়া হাঁকছেন। উপায় না পেয়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত দামে গেলেও আবার অনেকে হেঁটেই রওনা হয়েছেন।
বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা যাত্রী সুলতান মাহমুদ বলেন, সকাল সোয়া আটটা থেকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ইতোমধ্যে ২০ মিনিট পেরিয়েছে কিন্তু বাসে উঠতে পারছি না। অধিকাংশ বাস গেট বন্ধ করে আসছে। আমি তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ভেবেছিলাম আজ ছুটির দিনে ভোগান্তি কিছুটা কম হবে। কিন্তু ভোগান্তির তো কোনো শেষ নেই।
উত্তর বাড্ডা ওভারব্রিজের নিচে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা শফিকুল যাবেন যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায়। দূরত্ব বেশি না হলেও বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। শফিকুল বলেন, বাসের জন্য ২০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এর মধ্যে কয়েকটি বাস এলেও একটিতেও জায়গা খালি নেই। তাই রিকশা চালকের কাছে গেলাম। তিনিও দ্বিগুণ দাম চাচ্ছেন। এভাবে ভোগান্তি চলতে থাকলে আমরা অফিস কীভাবে করব?
শ্যামলীর মিরপুর রোডে দেখা যায়, এই পথে চলাচলকারী অনেক বাসই দরজা বন্ধ রেখে চলাচল করছে। ৩০ মিনিটের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রত্যেক যাত্রীকে বাসে উঠতে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গণপরিবহনের এমন সংকট রাজধানীর সর্বত্র দেখা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি বাসের চালকের সহকারীরা বাস সংকটের কারণ হিসেবে জানায়, তেলের দাম বাড়ায় আগের দামে ভাড়া চালানো সম্ভব নয়। সেজন্য নতুন দাম নির্ধারণের জন্য মালিকরা বাস কমিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার রাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম বাড়ানো হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ডিজেলের দাম ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা লিটার, কেরোসিনের দাম ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৪৬ টাকা। এত দিন অকটেন ৮৯ টাকা লিটার বিক্রি হতো। এখন তা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হবে। রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত