বাগেরহাটে খাবার পানির তীব্র সংকট

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৭ এপ্রিল ২০২১, ১৯:২৫ |  আপডেট  : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯

গ্রীষ্মের তাপদহ বাড়ার সাথে সাথে উপকুলীয় উপজেলা বাগেরহাটের রামপালের বিভিন্ন এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ উপজেলার প্রায় দুই লক্ষ মানুষের ৩০/৩৫ ভাগ মানুষ সুপেয় ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা থাকলেও বাকী মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বি ত থাকে সারা বছর।

তীব্র লবণাক্তপ্রবন এ উপজেলার সব এলাকায় গভীর নলকুপে সুপেয় পানি পাওয়া যায়না বলে শত শত মানুষ সারা বছর পুকুর ও বৃষ্টির পানি ধরে রেখে খাবার পানির চাহিদা পুরণ করার চেষ্টা করে থাকেন।

রামপাল উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারি প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, রামপাল উপজেলার ১০ ইউনিয়নে গভীর- অগভীর মিলে মোট নলকুপ আছে ৫ হাজার ৪২ টি। চালু আছে ৪ হাজার ৪৩৬টি। এরমধ্যে গভীর ৩ হাজার ৪৪০টি ও অগভীর ১ হাজার ১৭৯টি। গভীর নলকুপ চালু আছে ৩ হাজার ১৩১ টি। অকেজো আছে ৩০৯টি। অগভীর নলকুপ চালু আছে ১ হাজার ৩৩ টি। অকেজো আছে ১৪৬টি। গভীর নলকুপের মধ্যে চালু আছে গৌরম্ভা ইউনিয়নে ৪৬৫ টি, উজলকুড় ইউনিয়নে ৫৭৬ টি, বাইনতলা ইউনিয়নে ৪৫৬ টি, রামপাল সদর ইউনিয়নে ৬১৬ টি, রাজনগর ইউনিয়নে ২০৩ টি, বাঁশতলী ইউনিয়নে ৫০৬ টি ও হুড়কা ইউনিয়নে ২০২ টি।

সুত্র জানায়, উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে পেড়িখালি, ভোজপাতিয়া ও মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নে সুপেয় পানির কোন লেয়ার না থাকায় ওই তিন ইউনিয়নে গভীর নলকুপ বসালেও তাতে খাবার পানি পাওয়া যায় না। এর ফলে বছর জুড়ে শত শত মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষন করে তা দিয়ে খাবার পানির চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে। আর্সেনিকের মাত্রা বেশি থাকায় মানুষ এখন অগভীর নলকুপের ধারে কাছেও যায়না। তবে ভিএসএসটি ১৪৬টির মধ্যে চালু আছে ১৩৮টি। এসটিটি ২৩৬ টির মধ্যে চালু আছে ২২০ টি। পিএসএফ ১৫৫টির মধ্যে চালু আছে ১৪৮ টি। সোলার পিএসএফ চালু আছে ৬ টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মল্লিকেরবেড়, ভোজপাতিয়া ও পেড়িখালি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সারা বছরের খাবার পানির চাহিদা পুরণ করে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এই তিন ইউনিয়নের মানুষ যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন করে খাবার পানির চাহিদা মেটাতে পারে তার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ৭৮ টি ওয়াটার হার্ভেস্ট ট্যাংক বিতরণ করেছে। একটি ট্যাংকের আশে পাশের পরিবারগুলো ওই ট্যাংক থেকে খাবার পানির সুবিধা ভোগ করতে পারবে এমন নিয়ম থাকলেও অভিযোগ উঠেছে যে পরিবারে ট্যাংক বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেই পরিবার ছাড়া আশেপাশের কোন পরিবার খাবার পানির সুবিধা পাচ্ছেনা। এতে অনেকেই পানির জন্য ভোগান্তিতে পড়ছে। কোন কোন পরিবারের অভিযোগ তাদের ওই ট্যাংক থেকে সারা বছর এক কলসী পানিও দেওয়া হয়নি। আবার একই পরিবারে ২টি ট্যাংকও দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করে একজন দরিদ্র নারী বলেন, ট্যাংক’র পাশে বসবাস করেও সারা বছর এক ফোটা পানিও পাইনি। দূর থেকে পুকুরের পানি আনতে হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইমরান হোসেন বলেন, কোন পরিবার ট্যাংক পাবে তার সাইড সিলেক্ট করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেক্ষেত্রে হয়তবা কিছু ত্রুটি হতে পারে। তিনি আরোও জানান, এ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানির সমস্যা আছে পেড়িখালি, ভোজপাতিয়া ও মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন। এই তিন ইউনিয়নে অন্তত ২০ হাজারের মতো মানুষ সারা বছর খাবার পানির সংকটে ভোগেন। খাবার পানি সংকট দূরীকরনে গত বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুর গুলো হচ্ছে রামপাল সদর পুকুর, ঝনঝনিয়া পুকুর, বেতকাটা পুকুর, ফুলপুকুর, ভরসাপুর (উজলকুড়), সন্ন্যাসী পুকুর ও পিপুলবুনিয়া পুকুর।

মল্লিকেরবেড় এলাকায় জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় ৫২ লাখ টাকায় তিনটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প­ান্ট স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পথে। এ ছাড়া সামার ওয়াটার প্রকল্প নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫ কি.মি পাইপ লাইন চালু করা হবে। হাইসওয়া নামের একটি বিদেশী প্রকল্প গত ৩-৪ বছর পূর্বে খাবার পানি সরবরাহের একটি প্রকল্প চালু করলেও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন শেখ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘ দিন ধরে পানি সমস্যা থাকলেও সমাধানে ধীরগতির কারনে সুপেয় পানির তীব্র সংকট এখনো রয়েছে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা দিয়ে এ এলাকার মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করার জোর দাবি জানান তিনি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত