বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে: ফখরুল
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২২, ১৯:৪৫ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৯
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে এবং ক্ষমতার সঙ্গে ভাগাভাগি করে লুটপাট করছে তাদের। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি একটা লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই লুটপাটের স্বর্গ রাজ্য আজকে নতুন না। এটা আওয়ামী লীগের কেমিস্ট্রির মধ্যে আছে। যখনই তারা ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পায় তখনই তারা লুটপাট করে। সেজন্য মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সেই শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সময় বলেছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম পরিবর্তন করে দিয়ে সেটাকে বলা উচিত ‘নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি’। আজকেও একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তাদের দুর্নীতি করার জন্যে, তাদের সম্পদ বাড়ানোর জন্য তারা আজকে জনগনের পকেট কেটে এই সম্পদ তৈরি করছে। এই মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে কিন্তু সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও আজকের বাংলাদেশ এবং চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন ।
তিনি বলেন, আজকে টিসিবির ট্রাকের পিছনে গিয়ে যারা দাঁড়ায় ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনা জন্যে তাদের কোনো উন্নতি হয়নি, আমার গ্রামের কৃষকের পণ্যের দাম বাড়েনি, তাদের কোনো উন্নতি হয়নি, আমার শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি, তাদের কোনো উন্নতি হয়নি। আজকে আমাদের যে শিক্ষক স্বল্প বেতনে চাকুরি করেন তার কোনো পরিবর্তন হয়নি, আজকে ছোট ছোট ব্যবসায়ী হকার তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনে ‘ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আজকে আমরা যে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি, যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য পড়েছি। আমাদের মানুষকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের এই নতজানু নীতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি এবং স্বাধীন গণতন্ত্র যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয় তবে এই সরকারকে জেটিয়ে বিদায় করার ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি, সেই লক্ষ্যে আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি কথা বলেছি। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে, যারা দেশপ্রেমের বিশ্বাস করে তাদেরকে আহবান জানিয়েছি যে, আসুন আমরা সবাই শুধুমাত্র একটা লক্ষ্যে যেখানে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে- সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং একটা দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি। দেশের স্বার্থে, জনগনের স্বার্থে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে একটা গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি আজকের দিনে এটা হোক আমাদের শপথ।
মির্জা আলমগীর বলেন, আজকে পত্রিকায় দেখলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দেয়। আমি বলতে চাই, বিএনপি বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিয়ে কোনো দিন ক্ষমতায় আসেনি।
বিএনপির জনগনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ১৯৯০ সালে এসেছে এবং পরবর্তিতে প্রতিবারে প্রত্যেকটি নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই দল ক্ষমতায় এসেছে জনগনের ভালোবাসা নিয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আপনারা(মুক্তিযোদ্ধারা) যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন একাত্তরে, সেই স্বাধীনতাটা আর নেই এদেশে। এটা মুক্ত দেশ না।এখন নতুন একটা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এসেছে এই দেশে। সেটাতে আপনারা সবাই অংশগ্রহন করবেন। ইনশাল্লাহ যদি আল্লাহ আমাকে সুযোগ দেয় আমিও থাকবো সেই যুদ্ধে।
‘‘ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জালেম সরকারকে আমাদের সরাতে হবে। আমাদের গণঅধিকার পরিষদের উদ্দেশ্য মানুষের অধিকার ফেরত দেয়া একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা মোটামুটি একই জিনিস চাই। অন্য ব্যাপারে মতবিরোধী থাকতে পারে তবে এই সরকারকে যেতে হবে এবং একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই-এই ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।”
গণতন্ত্রের প্রতি খালেদা জিয়ার একাগ্রতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘ আপনাদের যে সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এতো সাহসের সাথে এতো বছর যুদ্ধ করছেন সত্যিই, আমি উনাকে দেখে সবসময় আমার একটা অনুপ্রেরণা হয় যে, এতো সাহস এই মানুষটির মধ্যে। এটাতে আমি আশ্চর্য হই।
উনি আসল সন্মানী লোক বাংলাদেশে। আমি আশা করি, এই সন্মানটা কোনো মানুষের কেড়ে নেয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের এই সময়ে ‘লুটতরাজ’ করে কানাডাসহ বিদেশে যেসব বাড়ি-ঘর কিনেছে তার আয়ের উতস্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সাবেক অর্থ মন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া।
সংগঠনের উপদেষ্টা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভা্ইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ডা. শাহাদাত হোসেন, শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত