বাংলাদেশের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইলে তিস্তার পানি দিতে হবে: ভারতকে ফখরুল

  রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৩ |  আপডেট  : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৭

প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হলে ভারতকে ‘বড় দাদা’সুলভ আচরণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশের সব পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে সম্মানের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।  

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাট তিস্তা রেল সেতুসংলগ্ন এলাকায় এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিস্তার পানি বণ্টন ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে দুই দিনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব।

ভারতকে উদ্দেশ্যে করে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইলে তিস্তার পানি দিতে হবে। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে আমাদের সাথে বড় দাদার আচরণ বন্ধ করতে হবে। আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেন। আমরা নিজ পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমাদের বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সাথে। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারত একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু তাকে দিল্লিতে রাজার হালে বসায় রাখছে। আর ওখান থেকে তিনি হুকুম জারি করে। এসময় তিনি উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগ আছে নাকি এখনো পালাইছে। আজকের এই সংগ্রাম আামাদের বাঁচা মরার লড়াই।

এসময় অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিরপেক্ষতার কথা বলেন। তাহলে আপনারা ভারতের কাছে থেকে ন্যায্য পানির হিস্যা চান। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সবসময় তিস্তার পানির কথা বলেছি। পাকিস্তানের আমলে পাকিস্তান বলেছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো, সবাই ভাবল, ভারতের বন্ধু যখন ক্ষমতায় এসেছে, পানি এবার পাওয়া যাবে। কিন্ত উল্টাটা, বাংলাদেশটাকে বেচে দিয়েছে, তিস্তার এক ফোঁটা পানি আনতে পারে নাই। শুধু তিস্তা নয়, ৫৪টা নদী আছে, সব নদীর উজানে ভারত বাঁধ দিয়েছে। ভারত তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদের পানি নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ফসল ফলাতে পারে না, জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। প্রত্যেকটা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে তারা। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেকেই বলছেন, আমরা ভোট ভোট করছি। ভোট ভোট করার কারণ হচ্ছে নেতা নির্বাচন। কেননা নির্বাচিত নেতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন করা। তাছাড়া নির্বাচন হলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। আর অশান্তি হবে না। স্থিতিশীলতা আসবে। তাই তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা দেন। 

এর আগে কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন' কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও আন্দোলনের সমন্বয়কারী সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডনসহ অন্যান্য নেতারা। 

তিস্তার পানি বণ্টন এবং তিস্তা নদীর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে পূর্বঘোষিত দুই দিনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয় ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন' কমিটির ব্যানারে। এই কর্মসূচি সরাসরি বিএনপির দলীয় কর্মসূচি না হলেও দলীয়ভাবে সমর্থন দিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারীর ১১ স্থানে ‘জাগো বাহে-তিস্তা বাঁচাও’ এই স্লোগানে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সেই সাথে তিস্তা অভিমুখে পদযাত্রা এবং নদীর দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটারজুড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন' কমিটি। 

তিস্তা চুক্তিসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান ও দেশের স্বার্থ রক্ষায় ভারতের ওপর চাপ বাড়াতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত