বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর নয় : স্পিকার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৪:১৩ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:০৩

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক ও কারিগরি সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস থেকে উত্তোরণের পর বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সম্পর্কে বহুমাত্রিকতা যোগ হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর নয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সেক্টরভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বহুমাত্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরও বেশি কারিগরি সহযোগিতা প্রয়োজন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে ইউএনডিপির এসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল কানি ভিগনারাজাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সঙ্গে বৈঠককালে স্পিকার আজ শনিবার এসব কথা বলেন।

কানি ভিগনারাজা স্পিকারের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ইউএনডিপিও তাই জাতিসংঘের নীতির আলোকে বাংলাদেশে সেক্টর ভিত্তিক কারিগরি সহযোগিতা জোরদার করতে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন পরিস্থিতিতে কার্বন ট্র্যাডিং, সকল প্রকার দূষণ প্রতিরোধ কিংবা সবুজ (পরিবেশবান্ধব) উৎপাদন প্রক্রিয়া জোরদার করার ক্ষেত্রে দক্ষতা বিনিময়ের মতো ইস্যূগুলোতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সংসদ সদস্যগণও এ সব কর্মকান্ডে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সমকালীন বিশ্বব্যবস্থায় নতুন নতুন প্রযুক্তি আর জ্ঞান বিনিময়ের মতো বিষয়গুলোকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সঙ্গে কাজ করতে পারে।

তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে সমকালীন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন এলাকার উন্নয়ন চাহিদাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত সংসদ সদস্যদের কাছে সহজলভ্য করতে হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহযোগিতা নিয়ে ‘মাই কনস্টিটিউএনসি’ অ্যাপ প্রবর্তন করেছে। এ অ্যাপ প্রবর্তনে ইউএনডিপি কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য স্পিকার ইউএনডিপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সভায় উপস্থিত ইউএনডিপির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ফ্রান্সিন পিকাপ স্পিকারকে অবহিত করেন যে, এ অ্যাপ বাস্তবায়নের বিষয়ে ইউএনডিপি কারিগরি সহযোগিতা জোরালোকরণে কাজ করে যাচ্ছে।

স্পিকার এ অ্যাপ বাস্তবায়নের পেছনে চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বলেন, এ অ্য্যাাপে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক হালনাগাদ পরিসংখ্যানগুলোর প্রতিফলন থাকতে হবে। যাতে করে সংসদ সদস্যগণ ওই অ্যাপের মাধ্যমে স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকার সেক্টর ভিত্তিক তথ্য-উপাত্তগুলো পেতে পারেন।

নিজ নির্বাচনী এলাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্পিকার বলেন, জনশুমারি সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট, বিীজ কিংবা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কিত পরিসংখ্যানও এ অ্যাপে থাকতে হবে। এতে করে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য বুঝতে পারবেন, কোন এলাকার কোন রাস্তা বা ব্রিজের উন্নয়ন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোর তুলনায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কিংবা ছাত্র-ছাত্রীর ঝরে পড়ার হার-এসব হালনাগাদ তথ্য তার কাছে থাকলে তিনি সেসব পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন। এতে টিকা প্রদান, স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত থাকাও জরুরি। সমকালীন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা হতে হবে তথ্যউপাত্তভিত্তিক এবং সুনির্দিষ্ট চাহিদা ভিত্তিক। কোনোভাবেই অনুমাননির্ভর নয় বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।

কানি ভিগনারাজা স্পিকারের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, এ অ্যাপ বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। জাতীয় সংসদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এটিকে আরও ইউজার-ফ্রেন্ডলি করার লক্ষ্যে কার্যক্রম নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, কার্বন নিঃসরণের মতো ইস্যূগুলো এখন খুব ভাইটাল হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এ নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন ফোরামে জলবায়ু অর্থায়ন-সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। বাংলাদেশকে এসব বিষয়ে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। পার্লামেন্টে এ সব বিষয়ে আলোচনাকে উৎসাহিত করতে হবে।

স্পিকার বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। প্রতিবছর বাজেট অধিবেশন চলাকালীন সংসদ সদস্যদের সেক্টরভিত্তিক তথ্যউপাত্ত সরবরাহ করার লক্ষে বাজেট এনালাইসিস ও মনিটরিং ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। এ বছর এই ইউনিট আটটি বিষয়ের ওপর ব্রিফিং করেছে। এ কাজে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে। ইউএনডিপি এই আদলে দক্ষতা উন্নয়নমূলক কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করলে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ স্বাগত জানাবে।

বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল মুহিত, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এম এ কামাল বিল্লাহ ও বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর শাহানারা মনিকা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত