বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ঐক্য পরিষদের ১০ম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন শুরু
প্রকাশ: ৭ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৫৮ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ‘সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়’ গঠনের দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমি সবিনয়ে এই দাবিটির সঙ্গে দ্বিমত পোষন করছি। ধর্ম নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিরোধীতা করছি। আমি পরিপূর্ণ ইসলাম ধর্মের প্রেক্ষাপটে বলতে চাই, ধর্ম নিয়ে মন্ত্রণালয় থাকার মানেই হচ্ছে এই রাষ্ট্র ধর্মকে গুরুত্ব দেয়া। ধর্ম একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। তাই ধর্ম নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন আছে এই রাষ্ট্রটিকে মানবিক করার। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশ হবে আদর্শ রাষ্ট্র কিন্তু এটি মন্ত্রণালয়ের কাজ না। মন্ত্রণালয়ের কী কাজ তা আপনারা জানেন।
ঐক্য পরিষদের বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবির সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করে বিশিষ্ট এই ইতিহাসবিদ বলেন, আমি বলতে চাই এই বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ নয়। এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নয়। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নয়। আমি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ চাই। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চাই। মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ধর্মীয়-জাতিগত বৈষম্যবিরোধী মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ১০ম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করে উদ্বোধনী ভাষনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘অস্তিত্বের লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ’ হবার আহ্বান জানিয়ে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে দুই দিন ব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি ত্রয় উষাতন তালুকদার, ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও। এছাড়া ঐক্য পরিষদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ২০২২ এর চেয়ারম্যান পঙ্কজ ভট্টাচার্য, কো-চেয়ারম্যান কাজল দেবনাথ, সদস্য সচিব মনীন্দ্র কুমার নাথ, ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, জীন বোধি ভিক্ষু প্রমুখ। অধিবেশন সঞ্চালনা করেন ঐক্য পরিষদের নেতা জয়ন্ত কুমার দেব। সকালে সম্মেলন শুরু হয় গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। একে একে গণসঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১০তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে অতিথিরা অবমুক্ত করেন শান্তির প্রতীক ১০টি পায়রা।
উদ্বোধনী ভাষনে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আমি পড়েছি, মানুষকে আগে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। আমার রাষ্ট্রে মুসলমান, হিন্দু খ্রিস্টান বলে কিছু নেই। সকলেই মানুষ। এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি কারাগার থেকে দেশে ফিরে আসলেন তখন রেসকোর্স ময়দানে ১৭ মিনিটের ভাষনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এ কথা আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। যার ভিত্তি কোনো ধর্ম ভিত্তিক হবে না। বাংলাদেশের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র। আমরা সবাই জানি সংবিধান রচনার সময় যুক্ত হয়েছিলো জাতীয়তাবাদ। ওই একই বছরে ১২ অক্টোবর গণপরিষদে ভাষন দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আদর্শ ঠিক হয়ে গেছে। এই আদর্শর ভিত্তিতে রাষ্ট্র চলবে। চারটি আদর্শ। ৭৫’এর পরে অবৈধ সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান কলমের খোঁচায় উড়িয়ে দিলেন এসব। এরশাদও ওই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন। ২০১১ সালে বর্তমান সরকার সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে চারটি রাষ্ট্র আদর্শকে ফিরিয়ে আনলেন। ধন্যবাদ সরকারকে।
আবার যখন অবৈধ সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ রাষ্ট্রধর্মকে সংরক্ষণ করলো তখনতো আমি তেলে-জলে মিলাতে পারি না। আপনারা সংবিধানের ৮.১ ধারা পড়ে দেখুন ৪টি রাষ্ট্র আদর্শ এখনো আছে সংবিধানে। সংবিধানের ৫২ ধারায় ধর্ম নিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝায় তা স্পষ্ট বলা আছে। একটি ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দিবে না। তাহলে রাষ্ট্র ধর্ম হয় কী করে? কিন্তু বলা আছে রাষ্ট্র ধর্ম হইবে ইসলাম। তবে অনান্য ধর্মাবলম্বীরাও ধর্ম পালন করতে পারবেন। অর্থাৎ কৃপা। কৃপার বিষয় নয়।
মুজিব নগর সরকার ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র প্রচার করেছে। সেখানে বলা আছে, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যয় বিচার। আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলুন এই ৫০ বছরে এই তিনটির একটি লক্ষ্যকে আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি কি না। আমরা অনেক এগিয়েছি। বিশ্বের নজর কেড়েছি। কিন্তু এই তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু এই তিনটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাহাত্তরের সংবিধান করেছিলেন।
উদ্বোধনীর পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শাহবাগ মোড় হয়ে আবারো ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। বিকাল ৩ টায় অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলনের ৩য় পর্ব আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী।
দ্বিতীয় দিন আগামী কাল শনিবার সকাল ১০টায় একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। সারাদিন ধরে তা চলবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত