বন্ধুসভার সদস্যদের সহয়তায় মা বাবা’র কাছে ফিরলো দুই শিশু 

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪৮ |  আপডেট  : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৪

মা বাবার সাথে অভিমান করে প্রায় এক বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল শিশু ফাহিম হোসেন (১২) এবং তার বন্ধু সিয়াম হোসেন (১৩)। এই দীর্ঘ সময় তারা কাটিয়েছে বিভিন্ন রেলওয়ে ষ্টেশনে। কখনও হোটেলে শ্রমিকের কাজ করে আবার কখনও বিভিন্ন এলাকায় পুরাতন প্লাষ্টিক বোতল ও কাগজ কুড়িয়ে তা বিক্রি করে খাবারের ব্যবস্থা করেছে তারা। তাদের সর্বশেষ ঠিকানা ছিল বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনে। সারাদিন বিভিন্ন কাজ করে রাতে ঘুমানোর জায়গা ছিল ষ্টেশনের পাশে সান্তাহার প্রেসক্লাবের গলিতে। শিশু দুটির এ ধরনের জীবন যাপনের চিত্র নজরে আসে সান্তাহার বন্ধুসভার সদস্যদের। শুরু হয় শিশু দুটির পরিবারের সন্ধানের কাজ। প্রথম দিকে কোন ভাবেই ফাহিম ও সিয়াম তাদের পরিবারের ঠিকানা দিতে রাজি হয়নি। পরে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এবং তাদের দুজনকে ভাল খাবার খাইয়ে পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়। এতে ফল মেলে। ফাহিম জানায়, তাদের দুজনের বাড়ি খুলনা জেলার দৌলতপুর থানার কহিনুর স্কুলের পাশে। ফাহিমের বাবা ইব্রাহিম হোসেন ও সিয়ামের বাবা রুমান সরদার দৌলতপুর মন্ডল জুট মিলের শ্রমিক। ফাহিম জানায়, মা বাবা তাকে একটি কওমি মাদ্রসায় ভর্তি করে দিয়েছিল। সেখানে শিক্ষকরা তাকে বেদম মারপিট করতো। মারপিটের ভয়ে কয়েকবার মাদ্রসা থেকে পালিয়ে আসি। কিন্তু বাবা আবার জোড় করে আমাকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেয়। পরে এক সময় বন্ধু সিয়ামের সাথে যোগাযোগ করি এবং দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি।

দুই শিশুর ঠিকানা পাওয়ার পর দৌলতপুর থানার ওসি প্রবীর কুমারের সাথে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি তাকে জানিয়ে তার সহয়তা চাওয়া হয়। পরে ওসি দুই শিশুর ছবিসহ ঠিকানা পাঠিয়ে দিতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে শিশুদের ছবি ও ঠিকানা তার বরাবর পাঠিয়ে দেয়া হলে ওসি প্রবীর কুমার শিশুদের বাবা মা’র সাথে যোগাযোগ করে সান্তাহারে পাঠিয়ে দেন। শনিবার ভোরে দৌলতপুর থেকে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে সান্তাহার আসেন ফাহিম ও সিয়ামের বাবা মা ও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা। পরে বন্ধুসভার সদস্যদের সহয়তায় ফাহিম ও সিয়ামকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়। ফাহিমের বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আপনারা আমাদের ছেলেদের ফিরিয়ে দিয়ে যে উপকার করলেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়, আল্লাহ আপনাদের ভাল করবেন। পরে দুপুরে খূলনাগামী রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান ।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত