বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২১, ১৯:৫৯ | আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৩০
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১৯ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ আহ্বান তিনি। ১০ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় দিনে প্যারেড স্কয়ারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসুন আমরা জাতির পিতার ১০১তম জন্মবার্ষিকী আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা সেই প্রতিজ্ঞাই নেই জাতির পিতা যে স্বপ্ন রেখে গেছেন সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো।
তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সবদিক থেকে বাংলাদেশের মানুষ যেন উন্নত সমৃদ্ধ জীবন পায় যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, যা তিনি সব সময়ই বলতেন। তার জীবনের স্বপ্ন ছিল এদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে।
রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ পরবর্তী ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচার, স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও তাদের দোসর যারাই ক্ষমতায় ছিল তাদের একটি নাম নিয়েই যত ভয় ছিল। সেই নামটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে কারণেই তারা দেশের ইতিহাস থেকে, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নামটি মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।
‘২১টি বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সত্যকে কখনো মুছে ফেলা যায় না। বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিলে স্থান পেয়েছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র এদেশের মাটির সন্তান, যিনি এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। মাটির সন্তান হিসেবে প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৫ আগস্টের পরে বা স্বাধীনতার আগেও যারা (বাঙালি) ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাঁরা কেউই এদেশের মাটির সন্তান না। তাদের জন্ম এ দেশের মাটিতে হয়নি। একমাত্র ভূমিপূত্র ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শ্রীলঙ্কা আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেশ। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে। আমরা পরস্পরকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে থাকি। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু এবং তিনি সব সময়ই বাংলাদেশের পাশে অবস্থান করেন। আমিও চেষ্টা করি সেই বন্ধুত্বের প্রতিদান দিতে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের যোগদান তাঁর নিজের ও শ্রীলঙ্কার জনগণের আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রতিফলন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে দশ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় দিন শুক্রবারের (১৯ মার্চ) অনুষ্ঠানের থিম ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’। এর আগে দ্বিতীয় ও প্রথম দিনের থিম ছিল যথাক্রমে ‘মহাকালের তর্জনী’ ও ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’।
তৃতীয় দিনের আয়োজনের আলোচনাপর্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। আলোচনা পর্বে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি লাভরফ এর ধারণ করা শুভেচ্ছাবার্তা প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথিদের ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক দেওয়া হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। স্বাগত সম্ভাষণের পর থিমভিত্তিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। জাতীয় সংগীত, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, মুজিববর্ষের থিম সংগীত, যতকাল রবে পদ্মা যমুনা শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বন্ধুরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যের ওপর টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’ থিমের ওপর সিজি অ্যানিমেশন ভিডিও, কবিতা আবৃত্তি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ওপর লোকসংগীত পরিবেশনা, নৃত্যনাট্য, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান, দুই প্রজন্মের শিল্পীদের মেলবন্ধনে মিশ্র মিউজিক পরিবেশন করা হবে।
বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান শেষ হবে রাত ৮টায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে আধ ঘণ্টার বিরতি থাকবে। অনুষ্ঠানটি সরকারি ও বেসরকারি সব টেলিভিশন ও রেডিও এবং বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
গত ১৭ মার্চ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় বক্তব্য রাখেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, খ্যাতিমান সাংবাদিক মার্ক টালি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত