বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে পাঠ্যপুস্তক ছিড়লেন শিক্ষক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:০৭ |  আপডেট  : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৫২

দেশের নতুন শিক্ষাক্রমের সমালোচনা করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তির মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে আর ক্লাস নিতে না যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক আসিফ জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তিনিও আর ক্লাসে ফিরছেন না। রবিবার (২১ জানুয়ারি) রাতে নিজের ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন শিক্ষক আসিফ মাহতাব।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে আসিফ মাহতাব লিখেছেন, ‘‘আজকে আমি ব্র্যাকে রেগুলার ক্লাস নিয়েছি। আমাকে (রাত ১১টা) এইমাত্র ফোন করে জানানো হয়েছে, আমি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস না নিতে না যাই। আমি জানি না, হঠাৎ কেন তারা এই সিদ্ধান্ত নিলো। আমাকে কোনো কারণ জানানো হয়নি।’’

এর আগে, গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে আয়োজিত ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেন শিক্ষক আসিফ মাহতাব।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এসময় তিনি এই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসিফ মাহতাবের এমন কর্মকাণ্ড ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাতিয়াস ফাহমিদ সোমবার সকালে জানান, তারাও আসিফ মাহতাবের স্ট্যাটাসটি দেখেছেন। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর মতো কোনো সিদ্ধান্ত তারা এখনো নেননি। এসময় তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য আরও সময় চেয়েছেন। বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।

‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে আসিফ মাহতাব নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইটি নিয়ে আসেন। পরে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবই ‘শরীফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্প আছে। আমি বইটি বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসেছি। এখানে লেখা আছে ছোটবেলা সবাই আমাকে ছেলে বলতো। কিন্তু আমি নিজেই একসময় বুঝলাম আমার শরীরটা ছেলের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। 

“সে (ছেলে) যদি মেয়ে হয় তাহলে তার বিয়ে হবে কার সঙ্গে? অবশ্যই ছেলের সঙ্গে। তার মানে এটা সমকামী, যা আমাদের দেশে অবৈধ। কিন্তু সেটাকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এই গল্পের মাধ্যমে। এটাতো স্কুলে ছেলেমেয়ের এক প্রকার ব্রেনওয়াশের মতো করা হচ্ছে, যেটা ইউরোপ-আমেরিকাতে করা হয়।”

এরপর সেমিনারে সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা এই বইটি বইয়ের দোকান থেকে ৮০ টাকা দিয়ে কিনে গল্পটির পাতা দুটি ছিঁড়বেন। পরে দোকানে আবার দিয়ে দিবেন। দিয়ে বলবেন, সেটি অর্ধেক দামে বিক্রি করতে। যাতে মানুষের সতর্ক হয়। 

২০১৩ সালের নভেম্বরে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। মূলত সপ্তম শ্রেণির এই পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিবন্ধকতা থাকলে সমাজে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও সেখানে তাদের বেড়ে উঠা, সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ না থাকা ইত্যাদি উঠে এসেছে এই অধ্যায়ে।

 

সা/ই

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত