ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা  

  ফরিদপুর প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৭ |  আপডেট  : ১২ মার্চ ২০২৫, ১০:২৯

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ’ পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে এক্সকেভেটর দিয়ে ভেঙে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। তবে ঘটনাস্থলে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ভাঙচুরে অংশ নিতে দেখা যায়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌরসদরের চৌরাস্তায় স্বাধীনতা চত্বরে নৌকায় বসা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভটি একটি এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে আংশিক ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিক্ষুব্ধ জনতাদের উল্লাস করতে দেখা যায়। এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের রোষানলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভটি আংশিক ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা। ভাঙচুরের খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ বিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষুব্ধরা ভাঙচুর চালিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশপাশের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে চলে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে তৎকালীন ফরিদপুর-১ সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমান শহরটির সৌন্দর্য বর্ধন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি সংরক্ষণে পৌরসদরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তায় স্বাধীনতা স্তম্ভটি নির্মাণের প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। স্থানীয় সরকার সরকারের অর্থায়নে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে প্রকল্পটি নাম দেওয়া হয় “বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ”।

ভাঙচুর নেতৃত্ব দেওয়া জিয়া প্রজন্ম দলের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মো. জাকারিয়া বলেন, গণ অভ্যুত্থানে শহীদ ভাইদের রক্তের দাগ এ মাটিতে এখনো শুকায়নি। অথচ পালিয়ে যাওয়া খুনি হাসিনা ভারতের মাটিতে বসে এ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এলাকার মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অনলাইনে ভাষণ দেওয়ার দুঃসাহসের প্রতিবাদে এই ভাঙচুর করা হয়েছে।উপজেলা ছাত্রদলের নেতা দাবি করে প্রবাস ফেরত দাদপুর গ্রামের বাসিন্দা বোরহান হোসাইন বলেন, আমরা এ দেশের মাটিতে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া শেকড় উপড়ে ফেলব। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ছায়াও এদেশে রাখবো না। যদি কোনো শক্তি ফ্যাসিস্টের পক্ষ নেয় তাকেও উপড়ে ফেলা হবে। আওয়ামী লীগের কোন স্থাপনা এদেশে রাখা হবে না। প্রয়োজনে আমরা লংমার্চ টু টুঙ্গিপাড়া কর্মসূচি নিবো।

ভাঙচুরে অংশগ্রহণ করা একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, ভাঙচুরের পর এখানে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে এখানে একটি সৌন্দর্য বর্ধনকারী স্থাপনা নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি। ঘটনাস্থলে আসা মাছুম বিল্লাহ নামে একজন বলেন, আমরা এমন কিছু চাই যা জাতিধর্ম ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে নির্মিত হোক। কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নয়। আমরা চাই বিদায় হজের ভাষণ সম্বলিত একটি স্তম্ভ এখানে নির্মিত হোক।

এক্সেভেটরটি (ভেকু) কোথায় থেকে আনা হয়েছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে এক পর্যায়ে জানা যায় বোয়ালমারী পৌর বাজারের ওয়াবদা মোড়ের জর্জ একাডেমী মার্কেটের এক ব্যবসায়ী উপজেলার লংকারচর গ্রামের বাসিন্দা ভজন চৌধুরীর। এ বিষয়ে মুঠোফোনে ভজন চৌধুরী বলেন, আমাকে গত রাতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহা এক্সেভেটরটি ভাড়ার জন্য ফোন করেন। তারপর আজ সকালে আমার ড্রাইভার (এক্সেভেটরের চালক) শামীম চৌরাস্তায় গিয়ে স্থাপনাটি আংশিক ভেঙে চলে এসেছে। আপনারা কি আবার ভাঙবেন কিনা এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চালক শামীম বলেছে, এটা এক্সেভেটর দিয়ে সম্পন্ন ভাঙা যাবে না। তবে বোয়ালমারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহা এসব কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি এখন ঢাকায় আছি। আমি তো ভজন নামে কাউকে চিনি না। আর আমি কেন ওইটা (বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ) ভাঙতে যাবো? এটা সম্পন্ন রং কথা আপনারা শুনেছেন।

ভাঙচুরের সময় ঘটনাস্থলে যাওয়ার থানার উপপরিদর্শক শরীফ আব্দুর রশিদ বলে, ওসি স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থাপনাটি ভাঙচুরকালে প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্থাপনাটি ভাঙচুর নিবৃত করার চেষ্টা করি। সেখানে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধদের বাধা দিতে গেলে তারা (ভাঙচুরে অংশ নেওয়া লোকজন) বলেন, শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া কিছুই আমরা রাখবো না। সেখানে জাকারিয়া নামে এক ছাত্রদল নেতাকে বিষয়টি বললে তারা উপরে লাগানো টাইলসগুলো ভেঙ্গে চলে যায়।

বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম রসুল বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশে কোন স্থাপনা ভাঙচুরে না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিষয়টি অবগত করলে ওসি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন কেটে দেন।

বোয়ালমারী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ভাঙচুরের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওখানে স্থানীয় গন্যমান্যদের সাথে কথা বলে সৌন্দর্য বন্ধনের জন্য ভালো কিছু করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশের ঢাকা ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের বাড়ি-স্থাপনায় ঘটনা ঘটলে শুক্রবার অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুচ এসব কিছু ভাঙচুরে দেশবাসীকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত