প্রেমিক প্রেমের সম্পর্ক অস্বীকার করায় স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ

  এসআর শফিক স্বপন,মাদারীপুর:

প্রকাশ: ৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:১৪ |  আপডেট  : ৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২১

প্রেমিক প্রেম ও শারিরীক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করায় গলায় ফাঁস দিয়ে ৭ম শ্রেনীতে পড়–য়া এক স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলার শিবচর থানায় মামলা হয়েছে।

পুলিশ ও অভিযোগে জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের  বাবলাতলা কাইমুদ্দিন শিকদারের কান্দি গ্রামের চাঁনমিয়া মোল্লার মেয়ে চর বাঁচামারা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী হাফিজা আক্তারের (১৪) সাথে তার প্রতিবেশী আবুল কালাম সরদারের বড় ছেলে পিয়ার সরদারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে। একবার হাফিজার গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগও করেন তার পরিবার। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে স্থানীয়ভাবে সম্প্রতি সালিশ দরবার হয়। সালিশে চাঁনমিয়া অভিযুক্ত পিয়ার নিজের দোষ অস্বীকার করলেও তার ছোট ভাই আলী সরদার সবার সামনে নিজেকে হাফিজার প্রেমিক ও দোষী বলে দাবি করেন এবং হাফিজাকে বিয়ে করতে রাজি হয়।  কিন্তু হাফিজা কোনভাবেই আলীকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না। সে বারবার বলছিল আমাকে নষ্ট করেছে পিয়ার সরদার আমি কেন আলিকে বিয়ে করবো, আমি যদি বিয়ে করি তবে পিয়ারকেই করব। একদিকে প্রেমিকের ভালবাসার কথা অস্বীকার আর অন্যদিকে পরিকল্পিতভাবে প্রেমিকের ছোট ভাইয়ের সব দোষ স্বীকার করে বিয়ে করতে চাওয়ায় কয়েকদিন ধরেই অন্যমনস্ক ছিল হাফিজা। বৃহস্পতিবার সন্ধায় নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দেয় হাফিজা। পরিবারের লোকজন হাফিজাকে উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এদিকে ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে রয়েছে পিয়ার হোসেনের পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগ অভিযুক্ত পিয়ার সম্প্রতি বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে। এই কারনেই পিয়ারের পরিবার স্থানীয় সালিশদের সাথে যোগসাজসে পিয়ারের ছোট ভাই আলীকে দোষী দাবী করায়।

নিহত হাফিজার ভাই সজীব মোল্লা বলেন, আমরা এলাকায় ন্যায় বিচার পাইনি, আমার বোন সম্পর্ক করছে কালাম সরদারের বড় ছেলে পিয়ার হোসেনের সাথে, আমার বোনকে ধর্ষণ করছে বড় ছেলে। অথচ সকলে মিলে বিয়ে দিবে ছোট ছেলে আলীর কাছে। এর কারন মূল আসামী পিয়ার বিদেশ যাবে তাই পরিকল্পিতভাবে পিয়ারের ছোট ভাই আলী নিজেকে দোষী দাবী করেছে। আর এই কারণেই আমার বোন আজ আত্মহত্যা করেছে। আমরা এই হত্যার ন্যায় বিচার চাই।

স্থানীয় মাহবুব হোসেন বলেন, পিয়ারের সাথে হাফিজার দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্ক ছিল। একবার হাফিজার গর্ভপাতও ঘটায় পিয়ার। এ ঘটনা এলাকার অনেকেই জানতো। এনিয়ে সালিশ বসলে সেখানে পিয়ার সব অস্বীকার করে। কারন পিয়ার বিদেশ চলে যাবে। কিন্তু পিয়ারের ছোট ভাই আলী নিজেকে দোষী দাবী করে এবং হাফিজাকে বিয়ে করতে চায়। সালিশরাও সত্য মিথ্যা যাচাই না করে আলীকেই বিয়ে করতে বলে এতে হাফিজা অনেক কষ্ট পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। 

নিহত হাফিজার মা নাছিমা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে নষ্ট করলো পিয়ার কিন্তু পিয়ার বিদেশ চলে যাবে বলে সালিশরা টাকা খেয়ে পরিকল্পিতভাবে পিয়ারের ছোট ভাই আলীর সাথে হাফিজার বিয়ে দিতে বলে এতে আমার মেয়ে বলতো এখনতো আমি এলাকায় মুখ দেখাতে পারবো না। তারপর আজ চলেই গেল আমার মেয়ে। আমি এর বিচার চাই।   

শিবচর থানার ওসি মোঃ মোক্তার হোসেন বলেন, নিহত হাফিজার সাথে পিয়ার সরদার নামের একজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পেরেছি। এখানে ধর্ষণের মত কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা ময়নাতদন্তে রিপোর্ট পেলেই বোঝা যাবে। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত